প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ অভিনীত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমায় ‘চিঠি এলো জেলখানাতে অনেক দিনের পর/ এই দুনিয়া ছাড়তে হবে এসেছে খবর’ গানটি আমরা অনেকেই শুনেছি। সাড়াজাগানো ওই গানের কথার মতোই কিছু হৃদয়স্পর্শী কথায় লেখা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক বন্দির চিঠি নানা দুয়ারে ঘুরছে।
এমনই এক চিঠি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের বরাবর লেখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাসস।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমি একজন অসহায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত মাদক (কোকেন) মামলায় আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আমি ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট থেকেই খুলনা জেলা কারাগারে আছি। এই চিঠি আপনার বরাবর আমার স্ত্রীর মাধ্যমে পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, এই মামলায় আমার ডিফেন্স কেস সুস্পষ্টভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা সত্ত্বেও বিচারক মামলার সাক্ষী, জেরা, জবানবন্দি সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করে আমার সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় আমার কোনো ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। আমার নামে আগে-পরে কোনো মাদকসংক্রান্ত মামলা নেই। আমি অত্যন্ত গরিব বিধায় যারা এ মামলায় জড়িত, তাদের আসামি না করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য যে বিচারক সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন।’
আইনজীবীর কাছে পাঠানো চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘আপনার কাছে আমার দৃঢ় আর্তনাদ, আমার ডেথ রেফারেন্স মামলাটি উচ্চ আদালতে (হাইকোর্টে) নিজেই শুনানি করতে চাই এবং সেই বিষয় কোনো আইনি সুযোগ আছে কি না? আপনার কাছে জানার দৃঢ়ভাবে আর্তনাদ রইল।’
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি চিঠিতে বলেন, ‘আমার মামলার নথি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে কোনো সচেতন বিচারক আমাকে দণ্ড দিতে পারবেন না। আর একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া মনে শুধু ওই ব্যক্তিকে নয়, তার পুরো পরিবারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া। উচ্চ আদালতের প্রতি আমার জোর আকুতি থাকবে, আমাকে শুধু তিন দিন শুনানি করার সুযোগ দেওয়া হলে নিম্ন আদালত যে বিচার করেছেন, তা আমি চ্যালেঞ্জের সঙ্গে নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে দেব। আর আমি যদি নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হই, তাহলে উচ্চ আদালতের কাছ থেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অনুমতি চেয়ে নেব। কারণ, বিনা দোষে জেল খাটার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।’
চিঠিতে আরও লেখেন, ‘আমার মতো অসহায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আর্তনাদ কেউ শুনতে চায় না। আমার এই আর্তনাদের কথা মাননীয় প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের অনেক বিচারপতি বরাবর আমার স্ত্রীর মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছি। এ ছাড়া মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড চেয়ারম্যান বরাবর এই আর্তনাদ জানিয়েছি কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।’
খুলনা জেলা কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামি বিকাশ বিশ্বাসের লেখা চিঠির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘চিঠিটি পেয়ে পড়ে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। এই চিঠি যুক্ত করেই হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলাটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করব।’