
গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় আজ বড় সমাবেশ করবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দুই সমাবেশ থেকে পৃৃথক পৃথকভাবে দেয়া হবে বিশেষ বার্তা। এর মধ্যে ছাত্রদলের সমাবেশ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সংগঠনটির ভূমিকা, তরুণদের কর্মসংস্থান, পরিবর্তিত রাজনৈতিক নির্দেশনা এবং শিক্ষার্থীদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার বার্তা দেয়া হবে। ওদিকে সমাবেশে নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করবে এনসিপি। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই ইতিবাচক রাজনীতি করছে ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগে কর্মসূচি ঘোষণা করেও এনসিপি’র আহ্বানে স্থান পরিবর্তন, কর্মদিবসে সমাবেশের জন্য জনভোগান্তির কারণে নগরবাসীর কাছে আগাম দুঃখ প্রকাশসহ করেছে ছাত্রদল। সমাবেশে কোন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড না নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিয়েছে সংগঠনটি। অন্যদিকে এনসিপিও ছাত্রদলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছে। একইসঙ্গে দু’টি দলের কর্মসূচি থাকায় যানজটে জনগণের ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে দলটি।
ছাত্রদলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমাবেশে ছাত্র নেতাকর্মীদের কয়েক দফা প্রতিশ্রুতি দেবে, যা তাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সমাবেশে মূল বার্তা দেবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেবেন বিভিন্ন দিকনির্দেশনা। এর মধ্যে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সময় জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার শপথসহ দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা নিয়ে থাকবে বার্তা। এ ছাড়া দেশের শিক্ষা খাতের মেরুদণ্ড যাতে ভেঙে না যায়, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না হয় এবং ছাত্র সমাজকে যাতে ভুল পথে না যায় সে বিষয়েও গঠনমূলক দিকনির্দেশনা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ওদিকে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রার মধ্যদিয়ে দেশের ৬১টি জেলায় মানুষের কথা শুনেছেন এনসিপি’র নেতারা। সেই অভিজ্ঞতাসহ নিজেদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা তৈরি করেছে দলটি। আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে এই রূপরেখা ঘোষণা করবে এনসিপি। অন্যদিকে আজ বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঘোষিত ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-২০২৪’ শীর্ষক স্মৃতি লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকবেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ৩রা আগস্ট শহীদ মিনার থেকেই আমরা সরকার পতনের দাবি তুলেছিলাম। আমরা বলেছি, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই এখনো শেষ হয়নি। আমাদের রাষ্ট্র চিন্তার রূপরেখা সম্পূর্ণ করবো এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে। জুলাই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা দেশের নানা প্রান্তে গিয়েছি, মানুষের কথা শুনেছি। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির মানবজমিনকে বলেন, সমাবেশে ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, তরুণদের কর্মসংস্থান, সহনশীল ও ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা দেয়া হবে। ছাত্রদল যে ইতিবাচক রাজনীতি করছে, তার উদাহরণ হচ্ছে- এনসিপিকে জায়গা ছেড়ে দেয়া, জনদুর্ভোগের কথা ভেবে নগরবাসীর কাছে আগাম দুঃখ প্রকাশ এবং সমাবেশ আগে শেষ করার চিন্তা আমরা করেছি।
ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন, সমাবেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রতিটি ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের জন্য টি-শার্ট, ক্যাপ ও আইডি কার্ড তৈরি করা হয়েছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য নেতাকর্মীদের ৬টি নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্রদল। নির্ধারিত জায়গায় সকল ইউনিটকে বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করতে হবে, কাঁটাবন মোড় থেকে আজিজ সুপার মার্কেট ও পিজি হসপিটালের মাঝের গলি দিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত এম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহনের চলাচলে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। এজন্য চারটি মেডিকেল টিম কাজ করবে। আর সমাবেশে অসুস্থদের জন্য পাঁচটি মেডিকেল টিম কাজ করবে। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিষ্কার করে সমাবেশস্থল ত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছে সংগঠনটি।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের জনদুর্ভোগের জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। সংগঠনটির প্রত্যাশা, নগরবাসী বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন। একটি দায়িত্বশীল ছাত্রসংগঠন হিসেবে ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আমরা আরও অধিকতর সচেতন নেবে বলেও জানিয়েছে ছাত্রদল।
বেলা আড়াইটায় শাহবাগে ছাত্রদলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ছাত্র সমাবেশ শুরু হবে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। সংগঠনটির ইতিহাসে সবচেয়ে ঐতিহাসিক সমাবেশ করতে চায়। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব মানবজমিনকে বলেন, ছাত্র সমাবেশের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল নামবে।
ওদিকে, শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে পৃথক সমাবেশ ও অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এদিন নগরবাসীকে ওই সব এলাকা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাচল করার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। গতকাল এক বিবৃতিতে এই নির্দেশনা হয় হয়। এ ছাড়া এইচএসসি ও সমমান এবং বিসিএস পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বিবৃতিতে।