কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সি গাল পয়েন্টে খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলর হত্যায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নিহত ব্যক্তির সফরসঙ্গী ও একই সিটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর। তবে খোঁজ মিলছে না তাদের সঙ্গে হোটেলে ওঠা রুমি নামে তরুণীর। তাকে খুনের শিকার খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুর পূর্বপরিচিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ঘটনার পরই তিনি কক্সবাজার ছেড়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এবং আটক হওয়া অন্য কাউন্সিলরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য জানা যেতে পারে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলেন খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও অপসারিত কাউন্সিলর টিপুর এবং একই সিটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অপসারিত কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালু। তাদের সঙ্গে ছিলেন রুমি। রাত ৮টার দিকে টিপুর মাথায় গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আততায়ীরা। এরপর চালুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে র্যাব-১৫। তার সঙ্গে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকার মিজবাউল হক ভূট্টো নামে আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ।
পুলিশ সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার সঙ্গে কক্সবাজারে অনেক ব্যবসায়ীর দেনা-পাওনা রয়েছে। তিনি কক্সবাজারে হ্যাচারি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া খুলনায় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। দু’জন সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। অন্যদিকে টিপু ও চালুর সঙ্গে কক্সবাজারে আসা তরুণী রুমিকে কেন তাদের সঙ্গে হোটেলে উঠেছিলেন তা জানা যায়নি।
পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ জানান, পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিয়ে কাজ করছে। দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে। পালিয়ে যাওয়া তরুণীর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এটি সাধারণ কোনো ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
হত্যাকাণ্ডের পর পরই কক্সবাজারে দায়িত্বরত র্যাব-১৫ গোলাম রব্বানী হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে। র্যাব অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, চালু ও ভূট্টোকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সড়কের হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আটক করা হয়। টিপু ও চালু শহরের গোল্ডেন হিল নামের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন। তাদের সঙ্গে এক তরুণীও ছিলেন।
হোটেল গোল্ডেন হিলের ‘অতিথি লিপিবদ্ধ বই’য়ের তথ্য বলছে, আটক চালু ও নিহত টিপুর সঙ্গে রুমি (২৭) নামের এক নারীও বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ওই হোটেলে উঠেন। রাতে আর ওই তরুণী হোটেলে ফিরেননি।
এদিকে আবাসিক হোটেলটির অভ্যর্থনা কক্ষের একটি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই নারীসহ নিহত টিপু হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সী-গালের সামনের ফুটপাতে অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে নিহত হন টিপু।
হোটেল গোল্ডেন হিলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিক সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সকালে টিপুসহ তিনজন মিলে হোটেল আসেন। পরে তিনি হোটেলটির দুই কক্ষ বিশিষ্ট ৭০০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে উঠেন। ফ্ল্যাটটির একটি কক্ষে টিপু এবং অপর কক্ষে দু’জন অবস্থান করছিলেন। সন্ধ্যার পর টিপু হোটেল থেকে বের হয়ে আর ফিরেননি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান জানান, টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি ইউনুস আলী শেখ বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছেন।
এদিকে নিহত টিপুর বাড়ি খুলনা নগরীর দেয়ানা উত্তর পাড়া এলাকায়। তিনি দক্ষিণ জনপদের অন্যতম শীর্ষ চরমপন্থী নেতা হুজি শহীদ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। তবে টিপুকে জনপ্রিয়তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিপক্ষ কক্সবাজার নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি তার বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশার।