
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্র মেরামত, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ এসেছে সেটা মিস করলে আগামী কয়েক দশকেও এ সুযোগ আর পাব না। কাজেই এ সুযোগ আমাদের কোনোভাবেই মিস করলে চলবে না।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়ার ওপর এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, এত কষ্ট ও এত ত্যাগ কখনই বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার ও রাষ্ট্র মেরামতের জন্য করেনি। শুধু বাংলাদেশে কেন সাব-কন্টিন্টের ইতিহাসেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা অনেক সময় অনেক সুযোগ পেয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর, ১৯৯১ সাল, ২০০৮ সালেও পেয়েছিলাম, কিন্তু কোনো সুযোগই আমরা সৎভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। এবার আমার মনে হয় এত ত্যাগ ও এত রক্ত ক্ষয়ের পর আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের যে সুযোগ এসেছে, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ এসেছে, এবার যদি আমরা সে সুযোগ মিস করি তাহলে আমার মনে হয় আগামী কয়েক দশকে এ সুযোগ আর পাব না। কাজেই এ সুযোগ আমাদের কোনোভাবেই মিস করলে চলবে না।
আইন উপদেষ্টা বলেন, অ্যাটর্নি সার্ভিস আইন করার জন্য আমরা আরও মতামত নেব, আলোচনা করব। সবার সহযোগিতায় আমরা একটা ভালো আইন করতে পারব। আর আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে- বর্তমান সরকারের আমলে যদি কিছু নিয়োগ আমরা অ্যাটর্নি সার্ভিসে দিয়ে যেতে পারি, সেই চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এসে ভালো ভালো অধ্যাদেশগুলো বাতিল করে দিয়েছে। এখন আমাদের পরবর্তী সরকারের জন্য এসব আইন বা সংস্কার বাতিল করা একটু কঠিন হবে। কারণ পরবর্তী সরকার আসবে আমাদের হাজারখানেক ছাত্র-তরুণের রক্ত ও আরও অনেকের যে অঙ্গহানি হয়েছে এমন মানুষ ও জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে। তো পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা যাবে না বা সম্ভব হবে না।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা একটা জিনিস সব সময় শুনতে পাই নিম্ন আদালতে বা উচ্চ আদালতে দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়। তবে সেখানে অনেক পক্ষ থাকে। শুধু স্টাফ বা জজরা করে তা কিন্ত নয়। সেখানে সরকারি আইনজীবীদেরও একটা ভূমিকা থাকে। আমি রিসার্চ করে দেখেছি তারা অত্যন্ত অল্প টাকা পান। বিশেষ করে যারা পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে আসেন, তারপরও এটার প্রতি প্রচণ্ড রকমের আগ্রহ থাকে সবার।
তিনি বলেন, আমি এমনও অভিযোগ শুনেছি মনে কিছু নিয়েন না অনেকে সরকারি উকিল হয়েও প্রতিপক্ষ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। এরকম কিছু উদাহরণ আছে, তবে সবাই না। অনেকেই আবার ভালো প্রাক্টিস করছেন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে কেরিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিস অধ্যাদেশ হয়েছিল। আমরা বুঝার চেষ্টা করলাম ২০০৮ সালের এ অধ্যাদেশ কেন টিকল না? তখন আমার কাছে মনে হয়েছে ওইটা একটু বেশি অ্যাম্বিসাস ছিল। আমরা এখন আইনটিতে দুটি পথ রেখেছি। একটা হচ্ছে কেরিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিসে ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে।
আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের যে কোনো আইন করার ক্ষেত্রে সব সময় একটা আশঙ্কা থাকে। আইন করা তো আসলে খুব কঠিন কাজ না। এটা সত্যি যে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে আইন হচ্ছে না। কিন্তু যদি কনসার্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে আইন করা যায়, তাহলে ওনাদের আমলে সংসদ সদস্যদের যে মান ছিল সেটার চেয়ে অনেক ভালো হয়, এটা আমার পর্যবেক্ষণ। আমার মনে হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রণীত অধ্যাদেশগুলোর গুণগত মান সংসদে প্রণীত আইন অপেক্ষা ভালো হয়।
সভায় খসড়া অধ্যাদেশটির বিভিন্ন ধারা ও উপধারা নিয়ে গৃহায়ণ, গণপূর্ত ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট এহসানুল হক সমাজী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন।