Image description

সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর ভ্রমণবিষয়ক তথ্যচিত্র বানাতে পাঁচ বছর আগে সহকর্মীদের নিয়ে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন সিনহা মো. রাশেদ খান। সেখানে  কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেনা কর্মকর্তা সিনহাকে।

ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে তখনকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ (বরখাস্ত) ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে (বরখাস্ত) মৃত্যুদণ্ড আর ছয়জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছিলেন কক্সবাজারের আদালত। গত ২ জুন হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।

 

রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, ‘মামলার সংশ্লিষ্ট পক্ষদের যুক্তিতর্ক, বিভিন্ন রায়ের নজির, সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আসামিদের স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দি, শক্তিশালী পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ, পরীক্ষা-পর্যালোচনা করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশের আপিল খারিজ করা হলো। তাদের ডেথ রেফারেন্স মঞ্জুর করে ফাঁসির রায় ও অর্থদণ্ড বহাল রাখা হলো। এ ছাড়া মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের প্রত্যেকের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে তাদের সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রাখা হলো।’

যাদের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখা হয়েছে তারা হলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

 

রায়ে খালাস পান বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। বিচারিক আদালত তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছিলেন, তাও বহাল রাখা হয় হাইকোর্টের রায়ে।   

এ মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি মো. জেনারেল জসিম সরকার ও মো. আসাদ উদ্দিন।

 
আর আসামিপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, মো. মনসুরুল হক চৌধুরী, মো. শফিকুল ইসলাম রিপন, সারওয়ার আহমেদ, শুভ্রজিৎ ব্যানার্জি, শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, এস এম মাহবুবুল ইসলাম, মো. আমিনুল ইসলাম, বশির আহমেদ ও আকরাম উদ্দিন শ্যামল।

 

আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ ও শুভ্রজিৎ ব্যনার্জি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় আছি। রায় বের হলে তা পর্যালোচনা করে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য আবেদন করে রাখা হয়েছে বলেও জানান এই আইনজীবীরা।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান।

 
ওই ঘটনায় ২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার আদালতে টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান করে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় ২ নম্বর আসামি। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় র‌্যাবকে। ২০২০ সালের ১৩ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। 

 

একই দিন পুলিশের দায়ের করা মামলা তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর ছয় আসামিকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই রায়ই বহাল রাখেন উচ্চ আদালত।