
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক ছাত্রনেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের উদ্যোগে আয়োজিত ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই আয়োজনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে আর্থিক অনুদান চেয়ে পাঠানো চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’ মন্তব্য করে জোরালো সুপারিশ করেন। এ নিয়ে ওঠে সমালোচনার ঝড়।
ফেসবুকে অনুদান চাওয়ার চিঠির অনুলিপি দিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ৭৬ লাখ টাকা তোলার জন্য ৭০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বলেছেন, দুই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার অনুদানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। ২১ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে এখনো পর্যন্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, কোনোটিতে বাংলায়। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বাজেটের বিস্তারিত যুক্ত করে দেওয়া হয় বলে চিঠিতে লেখা রয়েছে। বাংলায় করা একটি আবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা “জুলাই আন্দোলন” হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি “৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব।” এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।’
আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও সই করেছেন কে এস কে হৃদয়। তিনি ‘৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসবের অর্গানাইজার’ এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার ডিরেক্টর ও কো-ফাউন্ডার। ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবনায় সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই একটি আবেদন করা হয়েছে। তারা ২৩ জুলাই ২ লাখ টাকা অনুমোদনও করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভিসি সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেকগুলো ছাত্র সংগঠন অথবা ছাত্রছাত্রিরা (রাজনৈতিক নয়) বিভিন্ন কো-কারিকুলার, এক্সট্রা-কারিকুলার অনুষ্ঠানের আয়োজনে সহায়তা চেয়ে দেখা করতে আসে। বিভিন্ন বিভাগীয় এবং ফ্যাকাল্টির অনুষ্ঠানের জন্যও হরদম সহায়তার অনুরোধ আসে। সবগুলো আমি একই চোখে দেখে এসেছি।
তিনি বলেন, এ সমস্ত ইভেন্টে আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করি। কেবলমাত্র কোন রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান থেকে প্রশাসন দূরে থাকে। আমি মনে করি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কো-কারিকুলার, এক্সট্রা-কারিকুলার, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ভিষণ প্রয়োজন। আমাদের উচিত যতদুর পারা যায় সাহায্য করা। এর জন্য ফান্ড একেবারে নেই বললেই চলে। এরা সবাই নির্ভর করে স্পন্সরশিপের উপর। স্পন্সরশিপের জন্য আবেদনের উপর এরা আমার রেকোমেন্ডেশন চায়।
ভিসি বলেন, রেকোমেন্ডেশন চেয়েছে, কিন্তু পায় নি, এমন মনে করতে পারি না। আমি মনে করি, কো-কারিকুলার, এক্সট্রা-কারিকুলার, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য আমাদের ছাত্রছাত্রিরা যে উদ্যোগ নেবে তাতে আমার দিক থেকে সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এটা আমি শুরু থেকেই করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, আজ ঠিক এই ধরনের একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সোর্স থেকে একের পর এক আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমি একদম প্রথম দিন থেকে যেভাবে এই সমস্ত উদ্যোগের সাথে ছিলাম, সেভাবেই থাকতে চাই। কিন্তু পরিবেশ এতটাই বিষাক্ত, যে এরপর যেকোনো উদ্যোগে সাহায্য করার আগে আমাকে দশবার ভাবতে হবে।