
সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে কঠিন একসময় পার করছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে আগামী সপ্তাহটি বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ নির্ধারক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তিও আগামী সপ্তাহেই। আগামী সপ্তাহের ৫ আগস্টের আগেই জুলাই সনদ ঘোষণার চাপ রয়েছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। আবার এ সপ্তাহেই প্রধান উপদেষ্টা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন বলেও আলোচনা রয়েছে। মূলত নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসে, সেটি হবে একটি সত্যিকারের বিকল্প পথের সূচনা। তবে দীর্ঘদিনের সংলাপেও অনৈক্য থেকে গেলে রাজনৈতিক বিভাজন, মানবাধিকার সংকট ও আন্তর্জাতিক অসমর্থনের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে। সবকিছু মিলিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী সপ্তাহই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ পেছনে ফিরবে নাকি সামনের দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে যাচ্ছে আগামী সপ্তাহ।
রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এক সংকটময় পরিস্থিতির দ্বারপ্রান্তে। যতই দিন যাচ্ছে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রবল দ্বন্দ্ব, সামাজিক অসন্তোষ এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও ‘প্রশাসনিক অচলাবস্থা’ দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩ আগস্ট ঢাকায় বড় সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে এনসিপি। অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ ঘিরে বেশ গুজবও ডালপালা মেলেছে। অনেকেই বলছেন, সমাবেশের দিন ‘রাষ্ট্রপতির পতন হবে’। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ না হওয়া, সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে মতানৈক্য, ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর টানাপোড়েনসহ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয় সামনে আসছে। তা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দলগুলো এখনো বিভক্ত। একদিকে বিএনপির সুরে কয়েকটি দল বলছে ডিসেম্বরের মধ্যে না হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। অন্যদিকে, জামায়াত-এনসিপির সুরে কয়েকটি দল বলছে, আগে জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যাকারীদের বিচার ও জুলাই সনদ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে হবে। তারপর সংসদ নির্বাচন। সর্বশেষ গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে সরকার। তার ওই বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এখনো কয়েকটি ইস্যুতে মতৈক্যের চেষ্টা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ (খসড়া)’-এর কপি রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন, যা নিয়ে আগামীকালের মধ্যে চূড়ান্তভাবে মতামত দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ফলে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবার নজর এখন রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার দিকে। আগামী সপ্তাহে সেখান থেকে কী পদক্ষেপ আসে, সেদিকেই তাকিয়ে সবাই।
নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর বিতর্ক: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতন হলে ৮ আগস্ট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্রের অতিপ্রয়োজনীয় খাতে সংস্কারের দাবি ওঠে। তা ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শুরু থেকেই বলে আসছিলেন, সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই তারা জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন। এক পর্যায়ে তিনি ঘোষণা করেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। তবে অনেক দল সরকারের সেই ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারেনি। পরে গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই মাসেই ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে জাতির সামনে উপস্থাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিলে গত ৯ জুন চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্য যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ১৩ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। পরে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। এ ঘোষণা নিয়েও বিভিন্ন দলের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। কারণ, নির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়নি। তা ছাড়া বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদলগুলো বাদে অন্য দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলেছে। তার সঙ্গে নতুন বিতর্ক যুক্ত করেছে আনুপাতিক হারে বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ইস্যু। এটিও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
এর আগে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথমে ছয়টি এবং পরে আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করে। এ ১১টি কমিশনের সুপারিশমালা এরই মধ্যে পৃথকভাবে জমা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের ছয়টি কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টাকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করা এ কমিশন আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এই মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে। গতকালও কমিশনে সরকারি কর্ম কমিশন, দুদক ও সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিল। বিএনপির সঙ্গে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলও একই অভিমত জানায়। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারিতেও নির্বাচন হতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো পর তা মেনে নেয় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো, যদিও ঘোষিত এ সময়ে নির্বাচন আদৌ আয়োজন করা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছে তারা। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী চায় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। এ ছাড়া এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবি—আগে সংস্কার ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে হবে। এরপর হবে জাতীয় নির্বাচন। এর পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিও তুলছে এনসিপি।
জুলাই সনদের খসড়া দলগুলোর কাছে: জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ (খসড়া) গতকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যার একটি কপি কালবেলার কাছে এসেছে। সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, হাজারো মানুষের জীবন ও রক্ত এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। এ সনদে দেশের শাসন ব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব বা সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি থাকবে। এ সনদ গৃহীত হওয়ার পর পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে এবং এসব সংস্কার টেকসই ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হবে। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতির বিষয়টিও প্রতিশ্রুত থাকবে।
দলগুলোর নেতারা যা বলছেন: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে আমরা এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক করছি কিংবা নিজেদের মধ্যে কোন্দলে লিপ্ত হয়েছি, যা বাংলাদেশকে আরও পিছিয়ে দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ফ্যাসিস্টদের শক্তি জোগাতে পারে এবং সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে আবার নতুন করে বাংলাদেশের ওপর চেপে বসার। আমরা সারাক্ষণ সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সহযোগিতা করছি। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম কালবেলাকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। এ সময়ে অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি হিসাব রয়ে গেছে। গণহত্যাকারীদের বিচার হতে হবে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। তার মতে, ফ্যাসিবাদবিরোধী দল ও শক্তির মধ্যে রাজনৈতিক পলিসিতে মতভিন্নতা থাকলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ব্যাহত হয়—এমন কাজ ও বক্তব্য পরিহার করতে হবে।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক বছর এবং ৮ আগস্ট সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এ সময়কালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আমাদের সামনে আসবে। ১ বছরে আমরা রাষ্ট্রকে কতটুকু স্থিতিশীল অবস্থায় নিতে পেরেছি; গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে নাগরিকদের যে প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তার কতটুকু পূরণ হয়েছে; খুনি, লুটেরা, ফ্যাসিবাদীদের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কারের সনদ ও গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র কতদূর ইত্যাদি প্রশ্নগুলো এ সময়ে খুব জোরালোভাবে আসবে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করে তার একটা সুনির্দিষ্ট সমাধান চাইবে বড় একটা পক্ষ। আশা করি, ৫ বা ৮ আগস্টের মধ্যে সরকার এসব বিষয়ে একটা সন্তোষজনক স্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা কালবেলাকে বলেন, গত কয়েকদিনের রাজনৈতিক গতিবিধি পর্যালোচনায় এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে।
এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম কালবেলাকে বলেন, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। কেননা, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের প্রায় এক বছর হয়ে গেল। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়েও নির্বাচন না হওয়াটা আমাদের আশাহত করেছে। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও সরকার ব্যর্থ। অথচ অনেক আগেই সরকার নির্বাচন দিলে দেশে স্থিতিশীলতা থাকত। তা ছাড়া সময়ের ব্যবধানে কিছু রাজনীতিকের ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আর্থিক দুর্নীতি আমাদের ভীষণভাবে বেদনাহত করেছে। এখন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভাষণ দেবেন বলে শুনেছি। আমরা আশা করব, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে যেন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকে। নির্বাচন যত দ্রুত হবে, তত দ্রুত সংকট কেটে যাবে বলে মনে করি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির বিশেষ সহকারী বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু কালবেলাকে বলেন, দেশের চলমান সংকট নিরসনে দরকার অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ। এটি একমাত্র সমাধানের পথ। একই সঙ্গে দেশ ও জাতির কল্যাণে উপদেষ্টা পরিষদ ও রাজনীতিবিদদের সংযত হয়ে কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সংকট নিরসনে ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি মনে করি, এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এখান থেকেই সুষ্ঠু সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।
আগামী সপ্তাহ ‘রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট’: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মো. সাহাবুল হক কালবেলাকে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময়। এ সময়ে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আপামর জনসাধারণকে নিয়ে রাজপথে লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে গত ১৫ বছর জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা, ফ্যাসিস্টদের পরিণতি এই রকমই হয়। এখন সামনের সপ্তাহে পালিত হবে শেখ হাসিনা পতনের এক বছর। তিনি বলেন, গত এক বছর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ঘটনাবহুল বছর। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়টি হলো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে এবং কীভাবে হবে। তা ছাড়া এ সপ্তাহেই নির্বাচনের একটি তারিখ সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। সেটি ঘটলে দেশের রাজনীতির একটি নতুন টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। সেইসঙ্গে জুলাই সনদও ঘোষণা হতে যাচ্ছে এ সপ্তাহেই। এ সনদে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়, সেটিও দেখার বিষয়।
অধ্যাপক সাহাবুল হক মনে করেন, ওই দুটি বিষয় নিয়েই সামনের রাজনীতি আবর্তিত হবে। সরকারের সক্ষমতার বিষয়টিও সামনে আসবে। সরকার কীভাবে এ দুটি বিষয় বিবেচনা করবে, সেটির দিকে সব মহলই তাকিয়ে আছে।