Image description
জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শিগগিরই

আগস্ট মাসের শুরুতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বর্ষপূর্তির আগেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ করবেন। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হবে এমন ঘোষণা দিতে পারেন। এতে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে যে অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে, তা কেটে যাবে। শনিবার ১৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি উল্লেখ করেন। সরকারের একটি সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ড. ইউনূস বলেছেন, ‘পতিত শক্তি গন্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভন্ডুল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অন্যদিকে বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। এর চেয়ে আনন্দের বার্তা আর কিছু হতে পারে না।’ এ সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

ড. ইউনূস বলেন, ‘অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এই মস্তবড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই নানারকম গন্ডগোল সৃষ্টি করছে। এসব করে তারা দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। ‘যখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি তখনই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো ষড়যন্ত্রেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে সবগুলো গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য স্পষ্ট। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি। উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা ক্যাটাগরিকালি বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের একটা সুনির্দিষ্ট সময় তিনি ঘোষণা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে আনন্দের বার্তা আর কিছু হতে পারে না। আমি মনে করি আজ আমাদের আলোচনার সবচেয়ে ফলপ্রসূ বিষয় এটাই।’ জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, নৈরাজ্যের সমাধান করবে নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জন্য বলেছি। যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন, দেখবেন অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা সচিবালয়, বিচারালয়, পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক ও অন্যান্য জায়গায় আছে তাদের বিতাড়িত করতে হবে এবং যোগ্য মানুষকে সেসব জায়গায় বসাতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, মাঠপর্যায়ে সব ডিসি-এসপিদের চেক করতে হবে এবং ইন-অ্যাক্টিভ অ্যাডভাইজারদের বাদ দিয়ে অ্যাকটিভ পার্সনদের নেন।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারকে যদি কোনো মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে। যেমন-হিউম্যান করিডরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিসের ব্যাপারে নিয়েছে। এগুলো আসলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজের মধ্যে পড়ে না। এগুলো নির্বাচিত সরকার করবে।’ তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হলে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আমি একটা সুন্দর নির্বাচন করতে চাই এবং নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন দিতে চাই; কিন্তু পতিত স্বৈরাচার বিভিন্নভাবে এটাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। আমরা বলেছি, কঠোর হস্তে দমন না করলে পতিত স্বৈরাচার বিভিন্ন অজুহাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।’

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী হতাহত হলে পুরো দেশে ক্ষোভ এবং কিছু জায়গায় অস্থিরতা তৈরি হয়। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর ধারাবাহিকতায় তৃতীয় দফায় শনিবার ১৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এর আগে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি-জামায়াতসহ ৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরের দিন বুধবার বৈঠক করেন আরও ১৩ দলের সঙ্গে। এসব বৈঠকে চলমান অস্থিরতা কাটিয়ে আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা ও পরামর্শ চেয়েছেন ড. ইউনূস।

শনিবারের বৈঠকে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন এর মধ্যে রয়েছেন-জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস, ১২ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নেজামে ইসলাম পার্টির সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফী, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মুশতাক হোসেন, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।