Image description
 
 

লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রক্ত ও ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা হয়েছে। লন্ডনের ‘দ্য ক্লিনিক’–এর অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির অধীন লিভার, কিডনি ও হৃদ্‌রোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রাথমিক কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করেছেন।বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, লন্ডনের দ্য ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বেশ কিছু পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন; সে অনুযায়ী পর্যাক্রমে পরীক্ষাগুলো করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়ার শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষার ফলের ওপর নির্ভর করবে, কী ধরনের চিকিৎসা তাঁকে দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে ।

৭৯ বছর বয়স্ক খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, কিডনি সমস্যা, হৃদ্‌রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন এসেছেন গতকাল বুধবার। কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বুধবার যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল সোয়া নয়টায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বরণ করেন। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়াকে সরাসরি সেন্ট্রাল লন্ডনে দ্য ক্লিনিকে নিয়ে সেখানে ভর্তি করা হয়।খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসকদের একটি দলও লন্ডনে এসেছেন। বুধবার লন্ডনে হাসপাতালে যখন খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হয়, সে সময় তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসকেরা সর্বশেষ চিকিৎসাসংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য, কাগজপত্র দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসকদের বুঝিয়ে দেন। বুধবার ওই ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পরই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আজ সকাল থেকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। লন্ডনের এই ক্লিনিকে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে তাঁকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মামলায় সাজা নিয়ে তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন; কিন্তু বিএনপি নেত্রীর লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা অনেক দিন ধরে বলে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২০ সাল থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে কয়েক দফা আবেদন করা হয়; কিন্তু সেই সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেন। গত মঙ্গলবার কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। তাঁর এই যাত্রার সময় তাঁর গুলশানের বাসভবন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পথে পথে বিএনপি নেতা–কর্মীদের ঢল নেমেছিল। গতকাল লন্ডনে পৌঁছানোর পর থেকে সেখানে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।