Image description

মর্গের ভেতরটা নিস্তব্ধ, কিন্তু বাতাস ভারী—জেট ফুয়েলের ঝাঁঝালো গন্ধে। ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালের মর্গে ঢুকলেই বোঝা যায়, যেন যুদ্ধ শেষে ক্ষতবিক্ষত দেহগুলো এখানে আশ্রয় নিয়েছে।

প্লাস্টিক বডি ব্যাগের ভেতর যে যন্ত্রণার ইতিহাস গুমরে উঠছে, তা আর কল্পনায় নয়—বাস্তবে স্পর্শ করা যাচ্ছে। সোমবার দুপুরে কুর্মিটোলা আকাশে যে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়, তাতে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন। লাশগুলোর বেশিরভাগই শিশু এমনটাই জানালেন এক পুলিশ সদস্য, যিনি দুর্ঘটনার পর থেকেই মর্গে রয়েছেন। তিনি বলেন, “বডি ব্যাগ খুলে চোখ রাখা যায় না। ওদের বয়সই বা কত? ছয়, সাত কিংবা আট!”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও একটি সামরিক হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মর্গেই রাখা হয়েছে দগ্ধ লাশ। বডি ব্যাগ খুললেই বের হয় এভিয়েশন টারবাইন ফুয়েলের (এটিএফ) তীব্র গন্ধ—প্রমাণ করে কতটা ভয়াবহ ছিল বিস্ফোরণ। শিশুর শরীরেও লেগে আছে আগুনের দাগ, গলে যাওয়া কাপড়, ঝলসে যাওয়া হাত-পা।

মর্গের পাশের বিশ্রামকক্ষে বসে থাকা এক নারী অস্ফুট কণ্ঠে বলছিলেন, “বিমানটা নিচে পড়তেই চারপাশে আগুন। জানলার পাশে বসে ছিল আমার মেয়ে। কে জানত স্কুলটাই তার কবর হবে!” মেয়েটির নাম রুনা। বয়স মাত্র ৯। মা তার ব্যাগটা এখনো বুকে আগলে রেখেছেন। মাঝে মাঝে ফোঁপান, আবার চুপ করে বসে থাকেন। আশপাশে আরও অনেক মা-বাবা—কারও মুখে আর ভাষা নেই।

গোটা দেশ অপেক্ষা করছে তদন্তের ফল জানার। কিন্তু এর মধ্যেই শিশুদের কফিন নামিয়ে দেওয়া হয়েছে মাটির নিচে। এক মা বলেছিলেন, “ওর বইগুলো তো আগুনেও পুড়ল না, আমি সেগুলো নিয়ে যাব।” কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যান তিনি। এই ট্র্যাজেডি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে পুড়িয়ে দেওয়া এক কালো দিন।