Image description

নির্বাচন কমিশনকে সহায়তার ক্ষেত্রে সরকার ও কমিশনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে প্রাধান্য পাবে ইসি’র চাহিদা। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনকে যুক্তিসঙ্গত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করে আদালত কোনো আদেশ বা নির্দেশ দিতে পারবে না। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা যেকোনো বিভাগ দায়িত্বে গড়িমসি করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা পাবে ইসি। এসব বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। 

সূত্র বলছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের জন্য ইসি একটি খসড়া তৈরি করেছে। গত ১০ই জুলাই অষ্টম কমিশন সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। ওই সভায় আরপিও সংশোধনী বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। শিগগিরই কমিশনের আরেকটি সভায় এ খসড়ার ওপর বিস্তারিত আলোচনা হবে। ইসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, খসড়া আরপিও’র কয়েকটি অনুচ্ছেদে সংশোধনী এনে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুচ্ছেদগুলো হচ্ছে- ৫, ১৫, ২৯, ৪৪, ৮৯ ও ৯১।

অনুচ্ছেদ-৫ (৩)-এ নির্বাচন কমিশনকে সহায়তার ক্ষেত্রে সরকার ও ইসি’র মধ্যে মতবিরোধ দেখা নির্বাচন কমিশনের চাহিদাকে প্রাধান্য দেয়ার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ৫ (৪)-এ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারের কোনো বিভাগ কর্তব্যে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ইসিকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদ-১৫ (৩)-এ নির্বাচনে প্রার্থীদের আপিল নিষ্পত্তির পর কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচনার নতুন প্রস্তাব যুক্তের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ (৪)-এ প্রস্তাব করা হয়েছে, তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এমন কোনো নির্বাচনের বিষয়ে ইসিকে যুক্তিসঙ্গত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ প্রদান না করে আদালত কোনো আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করবে না। 
অনুচ্ছেদ ২৯ (২)-এ ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে অনুমোদন নেই-এমন ব্যক্তি অহেতুক ঘোরাফেরা করলে প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যগণ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবেন-এমন বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৪৪-এ বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের কোনো বিভাগ বা অন্য কোনো সংস্থার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান বা জেলার বাইরে বা মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে প্রত্যাহার বা বদলি করা প্রয়োজনীয় বলে প্রতীয়মান হলে, কমিশন লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব প্রেরণ করবে এবং কমিশনের নিকট  থেকে উক্ত প্রস্তাব প্রাপ্তির পর আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার বা বদলি কার্যকর করতে হবে।

এদিকে খসড়া সংশোধনী অনুযায়ী, প্রস্তাবিত অনুচ্ছেদ ৯১ চ-এ বলা হয়েছে, কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বা লিখিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যদি কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচিত কোনো প্রার্থীর হলফনামায় দেয়া তথ্য বা আয়-ব্যয়ের রিটার্নে গরমিল রয়েছে বা মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে-তবে কমিশন তাকে ন্যায্য শুনানির সুযোগ দিয়ে তদন্তের আদেশ দিতে পারবে। তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন লিখিত আদেশ দিয়ে তার নির্বাচন বৈধ ছিল না মর্মে ঘোষণা করে বাতিল করতে পারবে। এমনকি সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্বাচন বাতিল করে প্রয়োজন হলে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। নতুন এই বিধানে আরও বলা হয়েছে, কোনো সংসদ সদস্যের নির্বাচন এভাবে বাতিল হলে তিনি তার সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় পাওয়া সব আর্থিক সুবিধা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন। 

সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, একজন প্রার্থী দু’টি আসনে লড়তে পারবেন। বর্তমানে একজন একই সঙ্গে তিন আসনে প্রার্থী হতে পারেন। এজন্য ১৩ (ক) অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ-২০ এ একই মঞ্চে সব দলের প্রার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করার ক্ষমতা রিটার্নিং অফিসারকে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই মঞ্চে সব প্রার্থী নির্বাচনী ইশতেহার ও আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের অঙ্গীকার করতে পারবেন। তবে তারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে পারবেন না। এই ধারায় আরও বলা হয়েছে, দুই বা ততোধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কর্তৃক যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের জন্য কমিশন কর্তৃক সংরক্ষিত প্রতীক বরাদ্দ করতে হবে। অনুচ্ছেদ-২৭-এ প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়ার সুযোগ দিয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। ওদিকে অনুচ্ছেদ ২-এ সংশোধন এনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় যুক্ত করা হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)। এ ছাড়া খসড়া আরপিও’র অনুচ্ছেদ-১৯-এ সংশোধনী এনে ‘না ভোট’ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রার্থী বাছাইয়ের পর কোনো নির্বাচনী এলাকায় একজন বৈধ প্রার্থী থাকলে সেক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং না ভোট-এর মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর তুলনায় না ভোটের সংখ্যা বেশি হলে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে ভোট হবে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোটের সংখ্যা বেশি হলে তিনি জয়ী হবেন। এ ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যয় মনিটরিং, প্রার্থীদের হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য দেয়া, একই আসনে সমানসংখ্যক ভোট পেলে সেখানে পুনরায় ভোটগ্রহণ,  রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন স্থগিত রাখাসহ বেশ কিছু নতুন বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।