Image description

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। এটি এফ-৭ বিজিআই মডেলের বিমান।      

চীনের তৈরি এই বিমানটি মূলত একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট হালকা ওজনের যুদ্ধবিমান। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের চেংডু এয়ারক্রাফ্‌ট করপোরেশন (সিএসি)। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য চীনে এটি জে-৭ নামে পরিচিত। তবে রপ্তানির সময় এর নামকরণ হয় এফ-৭।

চীনের পিপল্‌স লিবারেশন আর্মির বহরে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এই জে-৭ জেটটি ১৯৬০-১৯৯০’র দশক পর্যন্ত দ্রুতগামী জেট ছিল। জে-৭ এর নকশার অনুপ্রেরণা নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কালে এমআইজে-২১ যুদ্ধবিমান তৈরি করে। তথ্য আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট এয়ারফোর্স টেকনোলজি ডটকম-এর। 
এভিয়েশনভিত্তিক ওয়েবসাইট এয়ারোস্পেস গ্লোবাল নিউজের তথ্য বলছে, চীনা কোম্পানিটি রপ্তানির সময় এফ-৭ যুদ্ধবিমানটি আমদানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে। সে সময় এর নামের সঙ্গে কিছু সংকেত ব্যবহার করা হয়। যেমন, বাংলাদেশ যদি এই সিরিজের যুদ্ধবিমান আমদানি করে তাহলে এফ-৭ এরপর ইংরেজি অক্ষর ‘বি’ যুক্ত হবে। আর গ্লাস ককপিটের নকশার ক্ষেত্রে ‘জি’ এবং উন্নত সংস্করণ বোঝাতে ইমপ্রুভড এর ‘আই’ যুক্ত হবে। এ সংস্করণের যুদ্ধবিমানে থাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল গ্লাস ককপিট, উন্নত রাডার ব্যবস্থা ও অ্যাভিওনিক্স (ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা) প্রযুক্তি।

এয়ারোস্পেস গ্লোবাল নিউজ (এজিএন) বলছে, এই ধরনের জেট সারা বিশ্বেই আকাশ প্রতিরক্ষা, বহুমুখী অভিযান ও পাইলদের প্রশিক্ষণের জন্যও ব্যবহার হয়। তবে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের চেয়ে এর দুর্ঘটনার হার বেশি। এর কারণ, পুরনো নকশার এয়ারফ্রেম, সীমিত নিরাপত্তা, আধুনিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব।

এফ-৭ এর যত দুর্ঘটনা: ২০০৮ সালের ৮ই এপ্রিল একটি এফ-৭ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের পাহাড়িপাড়া গ্রামে পাইলটসহ বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন স্কোয়াড্রন লিডার মোর্শেদ হাসান। সম্ভাব্য কারিগরি ত্রুটির কারণে বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হয় বলে সে সময় উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের ২৯শে জুন এফ-৭ এমবি ৪১৬ মডেলের একটি যুদ্ধবিমান চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বিধ্বস্ত হয়। নিখোঁজ হন পাইলট তাহমিদ রুম্মান। এটি বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করেছিল। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কয়েক মিনিট পর যুদ্ধবিমানটি পতেঙ্গা সৈকতের প্রায় ৬ নটিক্যাল মাইল দূরে সাগরে বিধ্বস্ত হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রশিক্ষণের সময় টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ বিজি। এতে নিহত হন পাইলট আরিফ আহমেদ। এয়ারক্রাফটটি ঢাকা থেকে উড্ডয়নের ২৫ মিনিটি পর মধুপুরের রসুলপুর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। 

সম্প্রতি বাংলাদেশে আরও যত যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা:  ২০১০ সালের ২০শে ডিসেম্বর দু’টি পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে। ২০১২ সালের ৮ই এপ্রিল একটি অ্যারো এল-৩৯ ক্র্যাশ হয়। ২০১২ সালের ২৬শে এপ্রিল একটি পিটি-৬ দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে জরুরি অবতরণ করে। ২০১৫ সালের ১৩ই মে একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়ে। ২০১৭ সালের ১১ই জুলাই চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় একটি ইয়াক-১৩০ দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। ২০১৭ সালের ২৭শে ডিসেম্বর দু’টি ইয়াক-১৩০ মাঝ আকাশে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে বিধ্বস্ত হয়। ২০১৮ সালের ৩রা জানুয়ারি একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ক্র্যাশ করে। ২০১৮ সালের ১লা জুলাই রাতের মিশনে কে-৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমান যশোরে বিধ্বস্ত হয়। ২০২৪ সালের ৯ই মে চট্টগ্রামে একটি ইয়াক-১৩০ বিমান বিধ্বস্ত হয়।