Image description

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।আহত ও দগ্ধ হয়েছে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।

দুর্ঘটনার পর থেকেই আহতদের আনা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। বিকেল গড়াতে না গড়াতেই হাসপাতালের করিডোরে কান্নার রোল শুরু হয়। ওয়ার্ডের সামনে কেউ বসে কাঁদছেন, কেউ অস্থির হয়ে হাসপাতালের লোকজনকে জিজ্ঞেস করছেন, “আমার ছেলেটা কোথায়?”, “আমার মেয়েটার কি হয়েছে?” 

 

কারও সন্তান পোশাক দেখে শনাক্ত করা যাচ্ছে, আবার অনেকেই কোনও খোঁজ পাননি। যারা শনাক্ত করতে পারছেন না, তারা বারবার ছুটে যাচ্ছেন এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ঘটে যাওয়া এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাটি যেন মুহূর্তেই এক টুকরো নরকে পরিণত করে দেয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা। দগ্ধ শিক্ষার্থীদের রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে খবর পেয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে ছুটে আসেন শামিমের বড় বোন সুমনা। শামিম মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি শাখার শিক্ষার্থী। দেহের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়ে এখন সে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। 

চোখের পানি মুছতে মুছতে সুমনা বলেন, খবর পাওয়ার পর এসে দেখি ভাইয়ের এই অবস্থা। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

একই হাসপাতালের করিডোরে আহাজারি করছেন মাহফুজা আক্তার। তার ১১ বছর বয়সী ভাগ্নি ওয়াকিয়া হোসেন নিধি ছিল মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই নিধিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়েকে খুঁজতে ছুটে এসেছেন নিধির মামা কবির হোসেনও। 

তিনি জানান, “অফিস থেকে বের হয়ে হঠাৎ শুনি দুর্ঘটনার খবর। দেরি না করে হাসপাতালে আসি। কিন্তু এখনো আমার ভাগ্নিকে পাইনি। তারা দুই বোন, কিন্তু এক বোনকে হারিয়ে এখন দিশেহারা পরিবার।”

নিধির মামী মাহফুজার চোখে এখন শুধুই শূন্যতা, মুখে কোনও শব্দ নেই, কেবল একটানা কাঁদছেন তিনি। নিধির নাম হাসপাতালের ভর্তি তালিকায় নেই, ডাক্তাররাও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। 

কেউ কেউ বলছেন—হয়তো অচেনা কারও পোশাক পরে ছিল, কেউ বলছে—বার্ন বেশি হওয়ায় চেনার উপায় নেই। এসব অনিশ্চয়তার মধ্যেই নিধির পরিবার এক ভয়ংকর মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিনিয়ত নতুন অ্যাম্বুলেন্স এসে থামছে ইনস্টিটিউটের সামনে। প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামছে পোড়া শরীরের অবুঝ শিশুরা। সঙ্গে ভেঙে পড়ছেন তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন। হাসপাতালের পরিবেশ হয়ে উঠেছে ভারী, শোকে স্তব্ধ যেন সব।

ইনস্টিটিউটের নিচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ডের সামনে স্বজনদের একই দৃশ্য—অজানা আতঙ্কে কাতর, অশ্রুভেজা মুখ। একদিকে চিকিৎসকরা  কাজ করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে স্বজনদের জন্য সময় যেন থমকে গেছে।

নিধির মতো আরও কয়েকজন শিশু এখনো নিখোঁজ। কেউ জীবিত আছে কিনা, নাকি পোড়া শরীর শনাক্তহীন হয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে—তা কেউ বলতে পারছে না। যেন নিধির মুখ, নিধির কণ্ঠ, নিধির চুলের গন্ধ হারিয়ে গেছে ধোঁয়ার সেই ঘূর্ণিপাকে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গুরুতর দগ্ধদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে বার্নের মাত্রা ও শারীরিক জটিলতা অনেক শিশুর জন্যই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।