
ঢাকা শহরের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে এমন একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকা নানা কারণে ঝুঁঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে আকাশ পরিবহন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম মানবজমিনকে বলেন, আমরা আগেও বলেছি, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো একটি বিমানবন্দর ঢাকা শহরের ঘনবসতি এলাকায় থাকাটা ঠিক না। এটা নানা কারণে ঠিক নয়।
কারণ উত্তরা, টঙ্গী বা আশুলিয়া ঘনবসতিপূর্ণ। ঘনবসতি এলাকায় প্রতিনিয়ত বিমান উঠানামা করে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনা ঘটলে গ্রাউন্ডে অনেক হতাহতের সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পাকিস্তান আমলে তৈরি করা হয়। এরপর থেকে সেটাই আমরা ব্যবহার করছি। নির্মাণের সময় তো ওখানে বসতি ছিল না, কিন্তু এখন তো অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য আমাদের বিমানবন্দর স্থানান্তর করতে হবে। ইতিমধ্যে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ তাদের বিমানবন্দর শহরের বাইরে সরিয়ে নিয়েছে।
এ ছাড়া সামরিক ও বেসামরিক বিমান একসঙ্গে উঠানামা করলে সব সময় রিস্ক থাকেই। কাজেই জাতীয় পর্যায়ে চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পনা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এদিকে গতকাল দুর্ঘটনার শিকার প্রশিক্ষণ এয়ারক্রাফট এফ-৭ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি চীনের তৈরি। এটি ১৫ থেকে ১৬ বছরের পুরনো একটি এয়ারক্রাফট। তবে এমন পুরনো হলেই উপযোগী না, এটা বলা যাবে না। যেকোনো এয়ারক্রাফট ২০ থেকে ২৫ বছর, এমনকি ৩০ বছরও ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, এয়ারক্রাফট মূলত মেইনটেন্যান্সের উপর নির্ভর করে। মেইনটেন্যান্স যদি প্রপার হয়, মেজর চেকগুলো যদি প্রপারলি করা হয়, সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কম হয়। এটার মেইনটেন্যান্সে কোনো সমস্যা ছিল কিনা বা ইঞ্জিনে কোনো সমস্যা ছিল কিনা দেখতে হবে। আমরা যতদূর শুনেছি, পাইলট একটি বার্তা দিয়েছিল যে, ইঞ্জিন নিয়ে উনি কিছু সমস্যা ফেস করছেন। কাজেই মেইনটেন্যান্সের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।
ওদিকে প্রশিক্ষণে বহু বছরের পুরনো বিমান ব্যবহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ। গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৯ই মে একজন বীর পাইলট, স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ প্রশিক্ষণ মিশনের সময় একটি যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ বিমানে প্রাণ হারান। শেষ মুহূর্তে তিনি নিজেকে না বাঁচিয়ে জনবহুল এলাকা থেকে বিমানের গতি ঘুরিয়ে দেন। বেঁচে যায় বহু প্রাণ। আজ আবার একই দৃশ্য। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাওকির ইসলাম সাগরও প্রাণ হারালেন অন্য একটি যান্ত্রিকভাবে ব্যর্থ বিমানে। ভিন্ন নাম, ভিন্ন তারিখ, কিন্তু গল্পটা একই। একজন দক্ষ, সাহসী, ব্রিলিয়ান্ট পাইলট আর ফিরে এলেন না।
তিনি লেখেন, প্রশ্ন উঠছে-১৯৬৬ সালের চাইনিজ রেপ্লিকা বিমান দিয়ে কি আমরা এখনো পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেবো? প্রতিটি প্রশিক্ষণ যদি হয় মৃত্যুর জুয়া, তবে এটা কি কেবল দুর্ঘটনা, না রাষ্ট্রীয় অবহেলা? ১৯৬৬ সালের ভাঙাড়ি প্লেন দিয়ে আর কতোজন মরলে এ রাষ্ট্র জাগবে? বিবৃতিতে আরও লেখেন, এটা কি কেবল যান্ত্রিক ত্রুটি? নাকি বাজেট প্রণয়ন ও বরাদ্দে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের দায়? নাকি প্রতিবার ক্যামেরার সামনে গিয়ে কিছু সহানুভূতিপূর্ণ কথা বলেই দায় সেরে ফেলার সংস্কৃতি? এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আকাশে এখনো উড়ছে সত্তর দশকের প্লেন। যেগুলো আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে অচল তো বটেই, প্রশিক্ষণেও অযোগ্য। বিশ্বের অনেক দেশ এসব বিমান ২০-৩০ বছর আগেই রিসাইক্লিং কারখানায় পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা? আমরা এখনো আমাদের প্রতিভাবান, অনুপ্রাণিত, উদ্যমী তরুণ পাইলটদের হাতে তুলে দিচ্ছি সেই ভাঙাড়ি প্লেন। এর নাম উন্নয়ন নয়। এর নাম আত্মঘাতী অবহেলা।