নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় এক মৎস্যচাষির পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার শিং মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দিনগত রাতে উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের নওপাড়া বর্মণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষি পরিবারটি।বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে সরজমিনে গেলে ওই পুকুরটিতে থাকা প্রায় সব শিং মাছ মরে ভেসে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম ও স্থানীয় থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সংশ্লিষ্টদের বরাতে জানা গেছে, মাছ ব্যবসায়ী সুনীল বর্মণ গত জ্যৈষ্ঠ মাসে তার বাড়ির পাশে থাকা ৩০ শতাংশের একটি পুকুরে দুই লাখ ও ১০ শতাংশের একটি পুকুরে এক লাখ শিং মাছের পোনা অবমুক্ত করে তা লালন পালন করে আসছিলেন। পুকুর পাহারা দেওয়ার জন্য তিনি আব্দুল জলিল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে নিয়োগও করেন। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাহারাদার জলিল ৩০ শতাংশের পুকুরটিতে গেলে তাকে দেখে পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিবেশী বাবুল বর্মণের ছেলে মিঠুন বর্মণ ও রণজিত বর্মণের ছেলে হৃদয় বর্মণ নামে দুই যুবককে চলে যেতে দেখেন। পরে রাত ১০টার দিকে তিনি আবারও পুকুরে গেলে সব মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখেন।
বিষয়টি জানতে পেরে পুকুর মালিকসহ স্থানীয় লোকজন ছুটে আসেন এবং পুকুর পাড়ে বিষ জাতীয় দ্রব্যাদির আলামত দেখতে পান। এর আগে গত শুক্রবার বিকালে ১০ শতাংশের পুকুরটিতে থাকা ১ লাখ শিং মাছও একইভাবে বিষ প্রয়োগে নিধন করা হয় বলে অভিযোগ করেন পুকুর মালিক।ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষি সুনীল বর্মণ দাবি করেন, শত্রুতার জেরে বাবুল ও রণজিতের ছেলে আমার পুকুরে বিষ দিয়ে সব মাছ মেরে ফেলেছে। এসব মাছ চাষ করতে গিয়ে আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিছু দিন পরেই মাছগুলো অন্তত ২০-২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। ওরা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই এবং ক্ষতিপূরণ চাই।
এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করলে মিঠুন বর্মণকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা বাবুল বর্মণ দাবি করেন, আমাদের সঙ্গে সুনীল বর্মণদের শত্রুতা ছিল এটা ঠিক। কিন্তু তা আরও আগেই মীমাংসা হয়ে গেছে। মাছ মরে যাওয়ার ঘটনায় আমার ছেলেকে অহেতুক দোষারোপ করা হচ্ছে।অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে হৃদয় বর্মণ দাবি করে, আমি নওপাড়া বাজারে মাছের ব্যবসা করি। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাজার থেকে বাড়ি এসে ঘুমিয়ে পড়ি। পরে রাত ১২টার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে জেগে শুনি, সুনীল বর্মণের পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠছে। বর্তমানে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনও শত্রুতা নেই। পুকুরে বিষ দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে এসে মৃত এবং জীবিত কিছু মাছ প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি। মৃত মাছের পেটে খাবার আছে। তবে জীবিতগুলোর পেটে নেই। তাই বাইরে থেকে পুকুরে কেউ বিষ জাতীয় কিছু দিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাছগুলো মারা যাওয়ার কারণ নিশ্চিত হতে হলে পুলিশের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) উমর কাইউম বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল দেখে এসেছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।