সাভারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স ও দুইটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রী ছিলেন। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দীক (১৪) অসুস্থ থাকায় স্ত্রী মহসিনা সিদ্দীক, স্ত্রীর বড় বোন সীমা আক্তার (৩৮) নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন ফারুক হোসেন সিদ্দীক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি তাদের। বর্তমানে তাদের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা। তাদের মরদেহের জন্য বাড়ির উঠানে রাখা আছে চার খাটিয়া।
নিহত ফারুক হোসেন সিদ্দিকীর ছোটভাই মামুন সিদ্দিকী বলেন, তারা তিন ভই একবোন। বোন সবার বড়। ইতালি প্রবাসী। বড়ভাই ফারুক সিদ্দিকী ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী স্থানীয় ভবনদত্ত গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে সে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। তবে থ্যালাসেমিয়া নয়। ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্য গত রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা থেকে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী ও তার বোনকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যোগে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশ্য। ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফারুক সিদ্দিকী।
মামুন আরও জানান, রাতে তার কাছে ফোন করে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এরপর আর কোন কথা হয়নি।ফারুক সিদ্দিকীর সহকর্মী মো. রুবেল মিঞা বলেন, প্রধান শিক্ষক খুব নীতিবান ছিলেন। একজন নীতিবান মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন শিক্ষক আর হবে না। আমাদের সবসময় আগলে রাখতেন। নিহত ফারুখ সিদ্দিকীর আরেক সহকর্মী তার চাচাতো বোন সোমা সিদ্দিকীকা বলেন, স্যারের ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিক (১১) হোস্টেলে থেকে মাদ্রাসায় পড়ে। সে এখনও জানে না তার বাবা মা আর ভাই পৃথিবীতে নেই।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হেপলু জানান, রাতে তিনি ফারুক সিদ্দিকীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাড়ি আসেন। এক সঙ্গে চা পান করেছেন। তার ভাষ্য এলাকায় ফারুক সিদ্দিকীর মতো ভালো মানুষ আর হবে না। তার মৃত্যুতে কাঁদছে পুরো গ্রামের মানুষ।এর আগে বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের ফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউনের সামনে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স ও দুইটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের চারজন মারা যান। সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওকাতুল আলম জানান, নিহত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা চারজন একই পরিবারের সদস্য। নিহত সীমা আক্তারের স্বামী মরদেহ শনাক্ত করেছেন।