
১.
বিবিসি বাংলা যখন তাদের রিপোর্টে কোন ছবি, ফুটেজ বা বিভিন্নজনের বক্তব্য প্রকাশ করে সেগুলো কী প্রক্রিয়ায় ভেরিফাই করে তা নিয়ে আমি একটু কনফিউজড। বিবিসি বাংলার গতকালের দুটি রিপোর্ট দেখে আমার এই কনফিউশন জাগলো। (একটি রিপোর্ট নিয়ে পরে আরেক পোস্টে আলোচনা করবো)।
বিবিসির প্রথম রিপোর্টটি হচ্ছে গোপালগঞ্জ নিয়ে। শিরোনাম, ''“বুকে ছিদ্র হয়ে গেছে... তিনটা গুলি” গোপালগঞ্জে নিহতের বাবা''।
মানবিক স্টোরি। সময়োপযোগী ও ভাল রিপোর্ট। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত রমজান কাজীর মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বর্তমান অবস্থা ও বক্তব্য তুলে আনা হয়েছে।
সমস্যা হচ্ছে বিবিসির ভেরিফিকেশনের দুর্বলতার। রমজানের পরিবারের সদস্যরা একটি ভিডিও দেখিয়েছেন বিবিসি রিপোর্টারকে (অথবা বিবিসির রিপোর্টারই ওই ফুটেজটি দেখিয়েছেন রমজানের পরিবারকে রমজানের মৃত্যুর আগের দৃশ্য হিসেবে। ভয়েসওভারে 'দেখানো' কথাটি থাকায় মনে হচ্ছে ফুটেজটি রিপোর্টারই দেখিয়েছেন)।
ওই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কালো গেঞ্জি ও প্যান্ট পরিহিত একটি ছেলেকে রাস্তার ওপর দিয়ে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে সেনা সদস্যরা। ছেলেটি জীবিত আছে এটা বুঝা গেলেও সে সম্ভবত গুরুতর আহত ছিল। বারবার তাকে দাঁড় করাতে চেষ্টা করলেও সে পারছিনা দাঁড়াতে।
স্পষ্টতই, রজমানের পরিবারের সদস্যরা এই ছেলেকে 'রমজান কাজী' হিসেবে মনে করেছেন এবং বিবিসিকে সেই দৃশ্য দেখিয়েছেন। এবং এই দৃশ্য গোপালগঞ্জের ঘটনায় সবচেয়ে আলোচিত ও নিন্দিত দৃশ্যগুলোর একটি।
বিবিসি তাদের রিপোর্টে সেনাদের টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া ছেলেকে রমজান হিসেবেই উপস্থাপন করেছে।
কিন্তু বাস্তবে একাধিক ফুটেজের বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, সেনাদের টেনে নিয়ে যাওয়া ছেলেটি আর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত রমজান কাজী একই লোক নন।
এ পোস্টের সাথে দেয়া স্ক্রিনশট কম্পারিজনটি দেখুন। স্পষ্ট হবে যে, রমজান গুলিবিদ্ধ হয় ফুলহাতা কালো শার্ট পরা অবস্থায়। অন্যদিকে, হাফহাতা কালো/সাদা মিক্স গেঞ্জি পরা ছিল সেনাদের টেনে নিয়ে যাওয়া যুবকের গায়ে। (এই যুবকের নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি, এবং এখন পর্যন্ত গোপালগঞ্জে নিহত ৫ জনের মধ্যে ওই যুবক ছিলেন না বলেই প্রতীয়মাণ হচ্ছে)।
এছাড়াও, রমজান কাজীর লাশ ও লাশ বহন করা ভ্যান রক্তে লাল হয়ে আছে। অন্যদিকে সেনাদের টেনে নেয়া যুবকের গায়ে রক্তের কোন অস্তিত্ব ক্যামেরায় দেখা যায়নি।
২.
রমজানের নিহতের ঘটনায় একটি 'অনুসন্ধানী' রিপোর্ট প্রকাশ করেছে Times of Bangladesh নাম একটি নতুন সংবাদমাধ্যম। তাদের 'অনুসন্ধানেও' দেখানো হয়েছে সেনাদের টেনে নিয়ে যাওয়া যুবকটিই 'রমজান কাজী'।
মজার বিষয় হলো, এই Times of Bangladesh নিজেরাই তাদের রিপোর্টে দেখিয়েছে রমজানের গুলিবিদ্ধ জামার ছবি, যেটি একটি ফুলহাতা কালো শার্ট!
মানে, গুলিবিদ্ধ জামা অবস্থায় যদি রমজানের গায়ে ফুলহাতা শার্ট থাকে তাহলে হাফহাতা গেঞ্জি পরা যে ছেলেটিকে সেনারা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল (যাকে বলা হচ্ছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে) সে রমজান কাজী হয় কিভাবে?
অনুসন্ধানে এই প্রশ্নের উত্তর নেই!