
ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান মাসুম (২৫) হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিতে যাচ্ছে পুলিশ। এতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ দুই শতাধিক আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। রোববার (২০ জুলাই) রাতে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গেল বছরের ৪ আগস্ট মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির অসহযোগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন কলেজ ছাত্র মাহবুবুল হাসান মাসুম। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি। নিহত মাসুম সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের তরাব পাটোয়ারী বাড়ির মৃত মাওলানা নোমান হাসানের ছেলে। তিনি ছাগলনাইয়া আব্দুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন।
এ ঘটনায় ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে ১৬২ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন—সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম পিটু, জিয়া উদ্দিন বাবলু প্রমুখ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ মামলায় এজাহারনামীয় ১২ জন ও সন্দেহভাজন ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মুরাদ হাসান বাবুসহ তিন আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বাদী ও নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটির চার্জশিট দিয়ে আসামিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। ৪ আগস্ট মহিপালে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের করা গুলি মাসুমের মাথায় লাগে। সহপাঠীরা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিন দিন আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আমার ভাই না ফেরার দেশে চলে যায়।
এ ব্যাপারে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা আশা করছি চলতি মাসের মধ্যেই এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা যাবে। অভিযুক্ত দুই শতাধিক আসামির মধ্যে এজাহারনামীয় ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা রয়েছেন।