
মানবিক সহায়তার বাজেটে ব্যাপক কাটছাঁটের কারণে প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ শরণার্থী জরুরি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে জাতিসংঘ শুক্রবার সতর্ক করেছে। এই সংখ্যা গত বছর জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সাহায্যপ্রাপ্তদের এক তৃতীয়াংশের সমান। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর একটি নতুন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুতি বেড়ে যাওয়া, তহবিল কমে যাওয়া ও রাজনৈতিক উদাসীনতায় লাখ লাখ শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষ একটি মারাত্মক সংকটের মুখে পড়েছে।
ইউএনএইচসিআরের বহির্বিশ্ব সম্পর্ক প্রধান ডোমিনিক হাইড জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি, যা জীবনের জন্য হুমকি। বিশ্বজুড়ে শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রতি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশের সাহায্যের বাজেটে বড় কাটছাঁটের ফলে ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, চলতি বছরে শরণার্থীদের সহায়তার জন্য তাদের প্রায় ১০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন, কিন্তু এখন পর্যন্ত এর মাত্র ২৩ শতাংশ অর্থ পেয়েছে তারা। এর ফলে জরুরি ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মসূচি বাতিল বা স্থগিত রাখা হচ্ছে।
হাইড সতর্ক করে বলেছেন, এ অবস্থায় প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ শরণার্থী ও জোরপূর্বক উচ্ছেদের শিকার মানুষ ইউএনএইচসিআরের মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। অনেক পরিবারকে সন্তানদের খাবার দেওয়া, চিকিৎসা নেওয়া ও ঘর ভাড়া দেওয়ার মধ্যে জরুরি একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা মারাত্মক অবস্থায় রয়েছে। জাতিসংঘকে তাদের খাদ্য সহায়তা ও পুষ্টি পরীক্ষা কমিয়ে দিতে হয়েছে, যা চাদে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জন্য বিশেষভাবে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা কার্যক্রমও হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মধ্যে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউএনএইচসিআর আরো জানিয়েছে, লেবাননে তাদের সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি এ বছরের শেষে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত মাসে ইউএনএইচসিআর ঘোষণা করেছে, বাজেট সংকটে তাদের বিশ্বজুড়ে কর্মচারী সংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ বা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে হবে।
অপর এক খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী হাজার হাজার বেসামরিক ভবন পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে স্যাটেলাইট চিত্রে। চলতি মার্চ মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহারের পর থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সম্প্রতি প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গাজার বহু শহর ও উপশহরের বেশির ভাগই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় একসময় হাজার হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ইসরাইল দাবি করছে, এই এলাকাগুলো বর্তমানে তাদের ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে।
বিবিসির যাচাই করা ফুটেজে দেখা গেছে, বিশাল বিস্ফোরণে ভবন ধসে পড়ছে, বাতাসে উড়ছে ধুলা ও ধ্বংসাবশেষ। শুধু যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে তা নয়, বরং অক্ষত ভবনগুলোকেও ইচ্ছা করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে গাজার স্কুল, হাসপাতাল, টাওয়ার ব্লক, এমনকি শিশুদের জন্য পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রও। রাফাহ শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত টেল আল-সুলতান এলাকায় অবস্থিত একমাত্র মাতৃসদন হাসপাতাল ও অনাথ শিশুদের যতœকেন্দ্রসহ প্রায় সব অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, এই এলাকার বেশির ভাগ ভবন আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি নাগাদ পুরো এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। শুধু একটি হাসপাতাল এখনো টিকে আছে। এ ছাড়া রাফাহর সৌদিপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় ইসরাইলি বুলডোজার ও ট্যাংকের উপস্থিতি দেখা গেছে। ভিডিওতে ধরা পড়েছে, রাস্তার পাশে খননযন্ত্র দিয়ে ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। টেল আল-সুলতান এলাকার বাসিন্দা মুয়াতাজ ইউসুফ আহমেদ আল-আবসি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক বছর আগে আমি আমার নতুন ঘরে উঠেছিলাম। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। এখন আমার সেই ঘর নেই, কোনো আশ্রয়ও নেই। এএফপি, বিবিসি।