Image description

গোপালগঞ্জে নিহতদের শরীরে গুলির আঘাত ছিল বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার। মারণাস্ত্র ব্যবহার ও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে অস্বীকার করছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। 

পুলিশ প্রধান দাবি করেছেন, কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগের কথা জানালেও ওই চার জন নিহত হওয়ার দায় নিয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। চারজন কাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন 

গোপালগঞ্জের বুধবারের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে পুরো ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। আরও জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ঘটনার জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সরকার ন্যায় বিচার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি এখন মোটামুটি স্বাভাবিক বলে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জের ঘটনা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কিনা এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা অভিযোগ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারেনি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনিও তো অনেক কিছু বলতে পারেন। যার যার বক্তব্য সে সে দেবে।

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি

বুধবারের ঘটনায় নিহত চারজনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। 

বুধবার রাত থেকে গোপালগঞ্জ শহরে কারফিউ বলবৎ আছে। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান কারফিউ শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত চলবে। তিন ঘণ্টা বিরতির পর শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে।

শহরে পুলিশ , র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি টহল দিচ্ছে। সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। 

পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বক্তব্য 

সংঘর্ষে যে চারজন প্রাণ হরিয়েছেন তাদের পরিবার জানিয়েছে নিহতদের শরীরে গুলির আঘাত আছে।  তবে বুধবার ঘটনার পর পুলিশের আইজি বাহারুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, পুলিশ কোনো লেথাল (প্রাণঘাতী) আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ এবং ছবিতে সেনাসদস্যদের প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। পুলিশেরও গুলি করার ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। তবে কোনো পক্ষই ওই নিহত চারজন তাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করছে না। 

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, রাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশ চলাকালে মঞ্চে আবার হামলা চালানো হয়। একই সঙ্গে জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং বিপুল ককটেল, ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে বিশৃঙ্খলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে গোপালগঞ্জে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয়গ্রহণকারী ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে খুলনায় স্থানানন্তর করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে গোপালগঞ্জে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এবং প্রশাসন কর্তৃক জারিকৃত কারফিউ চলমান রয়েছে।

এদিকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক ডয়চে ভেলেকে জানান, কোনো বাহিনী কোনো লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করেছে কীনা তা তদন্ত করে বলা যাবে। যে চারজন নিহত হয়েছেন তারা কীভাবে মারা গেছেন তাও তদন্তের আগে বলা যাবে না। আহতদের ব্যাপারেও তদন্ত চলছে।

তিনি জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুই-একজন যারা আহত হয়েছেন তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কেউ গুরুতর আহত হননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানান তিনি। 

নিহত- আহতদের পরিবার যা বলছে

যে চারজন নিহত হয়েছেন তাদের একজন সোহেল রানা। তার দুই শিশু সন্তান আছে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সোহেলের গোপালগঞ্জের চৌরঙ্গি এলাকায় মোবাইল ফোনের দোকান আছে। 

তার মামা জাহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, তার পায়ে এবং বুকে গুলি লেগেছে। সে চৌরঙ্গি এলাকায় দুপুরের দিকে ছিল। পুলিশ আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তরের পর বৃহস্পতিবার ভোর রাতে দাফন করেছি। আমরা কোনো মামলা করিনি। কার গুলিতে সে মারা গেছে তা আমরা বলতে পারবো না।

নিহত আরেকজন ইমনের চাচা শাকিল মোল্লা বলেন, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সড়কে ইমনের বা পায়ে গুলি করা হয়েছে। গুলি করার পর তাকে টেনে হিঁচড়ে নেওয়া হয়। বুট জুতা দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। পোশাকধারীদের সঙ্গে তখন একজন সিভিল ড্রেসেও ছিলেন, সেও তাকে লাথি মারে। ইমনের খালাতো ভাই রমজান তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইমন একটি মুদি দোকানে কাজ করতো। দুই ভাইবোনের মধ্যে সে বড়। সে-ই পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম। রাতেই পুলিশ তার লাশ হস্তান্তর করেছে।

গুলি করে টেনে নেওয়ার যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে ওটাই হলো ইমন, বলেন তিনি। মামলার প্রশ্নে শাকিল বলেন, মামলা করবো কীভাবে? আমরা ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় আছি। 

এই ঘটনায় আহতদের কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের একজন হলেন রিকশাচাক রমজান মুন্সি। তার ভাই হীরা মুন্সি জানান, সে রিকশা চালাচ্ছিল তখন তার বুকে গুলি লাগে। অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় বুধবার রাতেই তাকে আমরা ঢাকায় নিয়ে এসেছি। তার অবস্থা খারাপ। তার অপারেশন লাগবে। আরো কয়েকজন আহতকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস জানান, নিহত চারজনকেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। আর আহত ২০-২৫ জনের অধিকাংশের শরীরেই গুলির আঘাত আছে।

অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, গোপালগঞ্জে নিহত চারজনের মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না। তারা একই সঙ্গে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছে।

বিবৃতিতে আসক বলেছে, অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করতে হবে। এনসিপির নেতা ও সমর্থকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবিও আসকের।

বিবৃতিতে বলা হয়, জনসাধারণের ওপর বল প্রয়োগ, গুলি চালানো ও প্রাণহানির ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও সংবিধান-উভয়ের চরম লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক পরিসর, মানবাধিকারের মূল্যবোধ এবং নাগরিক নিরাপত্তার প্রতি একধরনের হুমকি। নাগরিকের জীবন রক্ষা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। গোপালগঞ্জের ঘটনায় রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং গুলির শব্দ স্পষ্টভাবে শোনা যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আসক বলেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক গণমাধ্যমে বলেছেন পুলিশ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেনি। তাহলে এই আগ্নেয়াস্ত্র কারা ব্যবহার করলো? আসক মনে করে, এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও প্রামাণ্য ব্যাখ্যা দেওয়া না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, ভয় ও প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা আরও বাড়বে।

আসকের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর আবু আহমেদ ফয়জুল কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমরা সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা দেখেছি তাতে যারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলেন তাতে তো স্পষ্ট যে তাদের হাতে অস্ত্র ছিল এবং তারা গুলি করেছেন। তারা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছেন। পুলিশ প্রধান বলছেন মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। এখন তদন্ত করে সরকারের প্রকাশ করা উচিত ওই গুলি কারা করেছে। ঢাকা মেডিকেলে ওই ঘটনায় আহত যারা ভর্তি হয়েছেন তারা গুলিতে আহত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এক বছর আগে এই মারণাস্ত্র ব্যবহার ও বল প্রয়োগের বিরুদ্ধেই আমরা সোচ্চার ছিলাম। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দক্ষতার সাথে কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে তার প্রশিক্ষণ দরকার।

মানবাধিকারকর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, একজন মানবাধিকারকর্মী হিসাবে গোপালগঞ্জে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও মারণাস্ত্র ব্যবহারকে কোনোভাবেই গ্রহণ করা যায় না। এর বিরুদ্ধেই আমাদের দীর্ঘদিনের অবস্থান। পাশাপাশি এনসিপির সমাবেশে হামলার নিন্দা জানাই।

তিনি মনে করেন এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব ছিল। সরকার চাইলে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারতো। এখন যা হলো তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

এনসিপি যা বলছে

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, পদযাত্রা আর মার্চ টু গোপালগঞ্জের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। এটা ছিলো আমাদের প্রচারের একটি কৌশল। আমরা এই পদযাত্রার প্রচারে নানা কৌশল ব্যবহার করছি। আমরা তো সারাদেশেই যাচ্ছি। আর গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশের বাইরে না। আমরা সব জায়গায় যাচ্ছি সেখানে কেনো যেতে পারবো না।

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, তারা পরিস্থিতি জানতো। কিন্তু সেই অনুযায়ী পর্যাপ্ত ফোর্স রাখেনি। সেখানে তো আমাদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে তো তারা মব বলি আর যাই বলি আমাদের জীবন নিতে চেয়েছিলো। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে আর কী করতে পারতো। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের লোকজনের হাতেও তো আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারাও তো গুলি ছুড়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

গোপালগঞ্জে বুধবার এনসিপির সমাবেশের কয়েকদিন আগে থেকেই পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খল বাহিনী সক্রিয় ছিল। তারপরও এমন পরিস্থিতি কেন হলো?

১ জুলাই থেকে সারাদেশে এনসিপির শুরু হওয়া ‘পদযাত্রা’ গোপালগঞ্জের ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তন হয়। এনসিপির ফেসবুক পেজে একদিন আগে ১৬ জুলাই এর নাম দেওয়া হয় ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’। কয়েকজন সমন্বয়কও তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে এটিকে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ' হিসেবে উল্লেখ করেন।  

ওই ঘোষণার পর থেকেই নানা ধরনের খবর ছড়িয়ে পড়ছিল। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার ঘিরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বুধবারের আগেই গোপালগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আর সেনাবাহিনীও সেখানে অবস্থান নেয়। বুধবার সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ পৌর মুক্তমঞ্চে এনসিপির সমাবেশের নির্ধারিত সময় ছিল। 

এনসিপি নেতারা পুলিশি নিরাপত্তায় বুধবার দুপুর ২টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন। তবে তার আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের গাড়িতে এবং সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। সমাবেশ শুরুর আগে এনসিপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা পৌর মুক্তমঞ্চে ওঠেন। এর কিছুক্ষণ পর ৫০-৬০ জনের একটি দল মঞ্চ ভাঙচুর এবং আগুন দেয়। সকাল থেকেই গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে গাছ ফেলে ব্যরিকেড দেয়া হয়। মঞ্চে আগুনের পর মূলত পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরমধ্যেই এনসিপি নেতারা হাজির হয়ে বেলা দুইটার পরপর সমাবেশ শুরু করেন। ৪০ মিনিটের মধ্যে তারা সমাবেশ শেষ করেন।

সমাবেশ করে ফেরার পথে শুরুতেই এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহরে হামলা হয়। তারা বিকল্প পথে ফেরার চেষ্টা করলে আবারো হামলা হয়। সেই অবস্থায় এনসিপি নেতারা জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে তারা সেনাবাহিনীর এপিসিপিতে করে বিকাল ৫টার দিকে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করে খুলনায় যান।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন আগেই শহরে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের টার্গেট ছিল এনসিপিকে সমাবেশ করতে না দেয়া। তারা লাঠি, দেশীয় অস্ত্র, ঢাল নিয়ে মহড়া দেয়।

কয়েক ঘণ্টা ধরে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তখন ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। এনসিপি নেতারা খুলনায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘তাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা চালিয়েছে।” পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এই ঘটনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বুধবার সৈয়দপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা যে পুলিশ বাহিনী নিয়ে কাজ শুরু করেছি, সেই পুলিশ আওয়ামী সরকারের নিয়োগ করা। তারা আমাদের পুরোপুরি সহযোগিতা করছে না। শেখ হাসিনা পুরো রাষ্ট্রকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গেছে। 

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের হয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন হারুন উর রশীদ স্বপন। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের। 

ইত্তেফাক