Image description
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি » জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত : » জামিনের পর ২১০০ নিম্ন আদালতে জামিনে মুক্ত ৪,৮০৮ জন । » বেশির ভাগ মাদক , চুরি , ছিনতাই ও ডাকাতি মামলার আসামি ।

সেলিম ওরফে চুয়া সেলিম । রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের এই বাসিন্দার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা , হত্যাচেষ্টা , অস্ত্র ও মাদকের ৩৫ টি মামলা রয়েছে । গত ৮ জানুয়ারি রাতে যৌথ বাহিনী একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে । তবে গ্রেপ্তারের চার মাসের মাথায় জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি লাপাত্তা । জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেলিমের প্রতিপক্ষ সোহেল ভূঁইয়া নভেম্বরে যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর জামিন পেয়ে আর আদালতে হাজির হননি । তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ১২ টি মামলা । এ দুজনের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত জামিনে মুক্তি পাওয়া ২ হাজার ১০০ আসামি আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না ।

ঢাকার নিম্ন আদালত ও ঢাকা মহানগর পুলিশের ( ডিএমপি ) প্রসিকিউশন বিভাগের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে । ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ( ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস ) এস এন মো . নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন , জামিন পাওয়ার বিষয়টি জন লাপাত্তা , আদালতে আর হাজির হচ্ছেন না । পুলিশ বলছে , মুক্তি পেয়ে অপরাধীরা আবার একই অপরাধে জড়াচ্ছে ।

আসামিদের আইনগত অধিকার ও আদালতের বিষয় । কিন্তু পুলিশকে এ জন্য একই কাজ একাধিকবার করতে হয় । এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ । এতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণও বাধাগ্রস্ত হয় । সূত্রগুলো বলছে , জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে ছিনতাই , চুরি , ডাকাতি , মাদক ও হত্যা মামলায় জামিন পেয়েছেন মোট ৪ হাজার ৮০৮ জন । তাঁদের মধ্যে ছিনতাই মামলায় ৭৫৬ , মাদক মামলায় ১ হাজার ৫৬৪ , চুরির মামলায় ২ হাজার ১৬ , ডাকাতি মামলায় ৪৬৮ এবং হত্যা মামলায় চার আসামি রয়েছেন । এদের বেশির ভাগই যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ।

জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামিদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন না । তাঁদের অনেকে আবার ছিনতাই , ডাকাতি , চুরি ও মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন । পুলিশের সূত্র জানায় , সেলিম ওরফে চুয়া সেলিমের অনুসারীরা জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে । আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকায় নাম থাকলেও সেলিম ক্যাম্পে থাকেন না । ওই ক্যাম্পে মাদক কারবারের প্রতিদ্বন্দ্বী সোহেল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধেও হত্যা , হত্যাচেষ্টা , অস্ত্র ও মাদকের ১২ টি মামলা রয়েছে । ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেলিম ও সোহেলের অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই গোলাগুলি হয় । গত সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে দুই মাদক কারবারি নিহত হন । নভেম্বরে সোহেল এবং জানুয়ারিতে সেলিমকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী । পরে দুজনই জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন । জেনেভা ক্যাম্পের কেউ সেলিম ও সোহেলের বিষয়ে মুখ খুলতে চান না ভয়ে ।

জানতে চাইলে শরীফ নামের এক ব্যক্তি বলেন , সেলিমের নাম শুনেছেন , তবে কখনো তাঁকে ক্যাম্পে দেখেননি । গেন্ডারিয়া থানার দুটি ডাকাতি মামলায় গত মাসে নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান আসামি রাজন । পুলিশের নথি বলছে , এই যুবকের বাসা গেন্ডারিয়ার ডিস্টিলারি রোডে । তিনি এখন পলাতক । একই মামলার পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলার মামলায়ও জামিন পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম রাজু । তাকে আগেও একবার গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ । জানুয়ারিতে যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার উত্তরা পশ্চিম থানার দুই মামলার আসামি রবিউল আওয়াল , খিলক্ষেত থানার দুটি ও মিরপুর মডেল থানার একটি মামলার আসামি রুবেল হোসেন , যাত্রাবাড়ী থানার দুটি ছিনতাই মামলার আসামি রুবেল এবং বংশাল থানার দুই মামলার আসামি পাক্কু রনি জামিন পেয়ে আর আদালতে হাজিরা দেননি । পাকু রনিকে যৌথ বাহিনী এর আগেও ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল ।

ডিএমপির সদর দপ্তরের অপরাধ বিভাগ বলেছে , আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক পরিশ্রম করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে । কিন্তু তাঁরা জামিন পেয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন । এতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে । ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের সূত্র বলছে , যেসব আসামি জামিন পেয়েছেন , তাঁদের অধিকাংশই মামলার তারিখ অনুযায়ী আদালতে আসছেন না । তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করা হয়েছে । তাঁদের আবার গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করতে হবে । ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ( পিপি ) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন , ‘ আমরা ছিনতাই , চাঁদাবাজি , মাদক কারবার , হত্যা মামলাসহ যেসব অপরাধী জনগণের জন্য হুমকি তাদের জামিনের বিরোধিতা করি । তারপরও কিছু অপরাধী জামিন পায় । তবে আমরা সব সময় চেষ্টা করি যাতে অপরাধীরা কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে জামিনে বের হয়ে না যায় । '