
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি, বিশিষ্ট সাহিত্যতত্ত্ববিদ ও সংস্কৃতিজন অধ্যাপক বদিউর রহমান গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) মধ্যরাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানিয়েছেন, বুধবার রাত ২টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বদিউর রহমানকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অমিত দে আরও জানান, আজ বেলা সাড়ে ১০টার দিকে অধ্যাপক বদিউর রহমানের মরদেহ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব চলবে। এরপর তার মরদেহ জন্মস্থান বরিশালে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হবে।
অধ্যাপক বদিউর রহমান ১৯৪৭ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে সেই বছরই শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন এবং ২০০৪ সালে সরকারি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সাহিত্যতত্ত্ব নিয়ে তার বিস্তর কাজ রয়েছে। গবেষণা, অনুবাদ ও সম্পাদনায় তার অর্ধশতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'সাহিত্য স্বরূপ', 'সাহিত্য সংজ্ঞা অভিধান', 'ধ্রুপদী সাহিত্যতত্ত্ব', 'বাংলার চারণ মুকুন্দদাস', ‘সত্যেন সমীক্ষণ’, ‘দ্য প্রিন্স’, ‘গণনাট্য’, ‘উপন্যাস ও জনগণ’, ‘সত্যেন সেন রচনাবলি’ (৯ খণ্ড, বাংলা একাডেমি, ঢাকা), 'রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ কবিতা' এবং ‘নজরুল অভিভাষণ ও পত্রাবলি'।
বদিউর রহমান আশির দশক থেকে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি উদীচীর সহ-সভাপতির দায়িত্বে আসেন। ২০২২ সালের জুনে উদীচীর ২২তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি সভাপতি পদে নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পদেই বহাল ছিলেন।
তবে জীবনের শেষভাগে তাকে কিছুটা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে উদীচীতেও ভাঙন দেখা দেয়, যেখানে একদল সদস্য, যারা বিভিন্ন বামপন্থি রাজনৈতিক দলেরও সদস্য, তাদের অভিযোগ ছিল যে বদিউর রহমান ও তার অনুসারীরা জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের 'দোসর'। এই ভাঙনের সূত্রপাত হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। চলতি বছর ৬-৮ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী ২৩তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করেছিল উদীচী। শিশু একাডেমিতে ৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের সমাপনী পর্বে কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনাকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদীচী সদস্য হাবিবুল আলম ও জামসেদ আনোয়ার তপনরা বদিউর রহমানের নেতৃত্বকে অস্বীকার করেন। পরে জুনে বদিউর রহমান সেই অসমাপ্ত জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন করেন এবং উদীচীর বৃহৎ অংশ তাকে পুনরায় সভাপতি পদে নির্বাচিত করে।