
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরও রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারে সম্মতি আদায় করতে পারছে না জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। স্প্রেডশিটে উল্লিখিত ১৬৬টি প্রস্তাবনার মধ্যে কিছু প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও বেশ কিছু বিষয়ে নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন করছে না রাজনৈতিক দলগুলো। এতে কমিশনের সংস্কার কার্যক্রম ও জুলাই সনদ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ। যার বিভিন্ন বক্তব্যেও অনিশ্চিয়তার দিক উঠে এসেছে। গতকালও এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাজের অংশীদার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যদি আমরা কোথাও ব্যর্থ হই, সে ব্যর্থতা আমাদের সবার। কমিশন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে এটা সবার মিলিত ব্যর্থতা হবে। এর আগে ২৯শে সেপ্টেম্বর তিনি বলেছেন, গত সাতদিনের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এখনও হয়নি। ওইদিন বহুল প্রত্যাশিত ‘জুলাই সনদ’- কবে নাগাদ হতে পারে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। একই দিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব সম্পর্কে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যদি সব বিষয়েই একমত হতে হয়, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকার যৌক্তিকতা কী?
গতকাল এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে সব দল ছোটখাটো সংস্কার প্রস্তাব মেনে নিলেও মৌলিক সংস্কারের বিষয়গুলো উত্থাপন হলেই বিএনপি ও গুটিকয়েক দল সেখানে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা (বিএনপি) ঐকমত্যের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। শুধু তাই নয়, মৌলিক সংস্কারের এজেন্ডাগুলো যেন ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে না থাকে, তার পরিবেশ তৈরি করছে।
এমতাবস্থায় মৌলিক বিষয়ে জটিলতার দায় কে নেবে? কবেই হবে সংস্কার? জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদ কবে হবে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচেছ না। সব মিলিয়ে এক জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে। অথচ গত বছরের ৮ই আগস্ট সরকার গঠনের পর থেকে রাষ্ট্র সাংস্কারের বিষয় বলে আসছে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কারের লক্ষ্যে এক মাস পর গঠন করা হয় ৬ কমিশন। এরপর একে একে গঠন করা হয় আরও কয়েকটি কমিশন। তবে প্রথমে ঘোষিত ৬ কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারে হাত দেয় সরকার। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি এসব কমিশনের প্রধানদের নিয়ে গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যে কমিশনের সভাপতি স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ কমিশন ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেছে সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে। এরপর সব রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার নিচে এনে শুরু হয় আলোচনা। স্প্রেডশিটে উল্লিখিত ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি মৌলিক প্রস্তাবের সুরাহা হচ্ছে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে এখনো নিষ্পত্তি হয়নি সেগুলো হলো- সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি (যা পূর্বে ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ বা ‘এনসিসি’ নামে প্রস্তাবিত ছিল), দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি), সংসদে নারী আসন (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি), প্রেসিডেন্টের নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার (গঠন প্রক্রিয়া), বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ। নাগরিকের মৌলিক অধিকার সমপ্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]।
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৪তম দিনের আলোচনা হয়, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, সংবিধান সংশোধন, সংসদে নারী আসন। তবে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো এই বিষয়ে আলোচনা করেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি কমিশন। এছাড়াও কোনো কোনো রাজনৈতিক দল চায় পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন আবার কেউ কেউ চান আসনের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠিত হোক। সংবিধানের বিশেষ বিশেষ সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন বলে মনে করছে রাজনৈতিক দল ও কমিশন। বিএনপি বলছে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে নয় তারা। দলটি বলছে, সংসদে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এছাড়া, ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায়ও যদি কেউ কখনো পরিবর্তন আনতে চায়, সেটাও যাতে গণভোটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জামায়াতে ইসলামী বলছে, একটি মাত্র দল বা সরকারের একক সিদ্ধান্তে সংবিধান সংশোধনের বিপক্ষে তারা। এর জন্য দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি থাকতে হবে। বিরোধী দলেরও মতামত নিতে হবে। মৌলিক বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট হতে হবে এবং এটি যেন রাষ্ট্রের জন্য হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের বিবেচনা করতে হবে, ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দায়দায়িত্ব আমাদের (কমিশন) উপর অর্পিত হয়েছে, সে দায়িত্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের ওপর, আমরা তার অংশীদার হয়েছি মাত্র। কমিশন আপনাদের প্রচেষ্টার অংশীদার হয়েছে, আলাদা সত্তা হিসেবে যুক্ত হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে মিলেই সফল হতে হবে। সে সাফল্যের মাপকাঠি হচ্ছে আমরা একটা কাঠামোগত সংস্কারের ব্যাপারে একমত হতে পারছি কি, পারছি না। কিছু কিছু জিনিস আমরা এরইমধ্যে একমত হয়েছি। কিছু বিষয়ে আপনারা প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় একমত হয়েছেন। আর কিছু নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় আছে। এগুলো আমরা আলোচনা করবো। আগামী কয়েকদিনের আলোচনায় সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা যেন প্রত্যেকের দায় এবং দায়িত্ব অনুভব করি।
আলী রীয়াজ বলেন, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট- সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট তৈরির ব্যাপারে তাদের সমর্থন রয়েছে, সেভাবেই তারা মতামত দিয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায়ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের একই মতামত পাওয়া গেছে। গঠন প্রণালি নিয়ে আগেও আলোচনায় করে ঐকমত্য হওয়া যায়নি। আজকেও যেটা দাঁড়িয়েছে যে দলগুলো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করলেও মূলগত জায়গায় তারা তাদের অবস্থানেই আছেন।
তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন ভোটের সংখ্যানুপাতে যেন উচ্চ কক্ষ গঠন করা হয়। অন্যদিকে, আসনের সংখ্যানুপাতের প্রস্তাবও আছে। যেহেতু রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্যে আসতে পারছেন না, সেহেতু এ বিষয়ে ভার কমিশনের উপরে অর্পণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।
আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ের সঙ্গে উচ্চ কক্ষের বিষয়টি যুক্ত। এরপরেও আমরা আলোচনার পর এক জায়গায় আসতে পেরেছি- যদি উচ্চ কক্ষ গঠিত না হয় অথবা উচ্চ কক্ষ গঠিত হওয়া পর্যন্ত, সংবিধান সংশোধনীর জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটের প্রয়োজন হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কতোগুলো অনুচ্ছেদ- যেমন প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেটা ৫৮ (খ) (গ) (ঘ) (ঙ) সংবিধানে যুক্ত হবে, সেগুলো সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
বৈঠক শেষে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আলোচনার জন্য তিনটি বিষয় নির্ধারিত ছিল। এরমধ্যে দুইটি বিষয় আলোচনা হয়েছে- প্রথমে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের আপার হাউজ (উচ্চ কক্ষ) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নিয়ে প্রায় সবাই একমত। কিন্তু এটার গঠন ও পাওয়ার ফাংশন বিষয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। আমরা আমাদের ৩১ দফার মধ্যে দিয়ে যে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছিলাম- দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যারা বিশিষ্টজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী এবং যাদের জাতি গঠনে অবদার রয়েছে, এবং দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে। তাদের মেধা ও প্রজ্ঞার যে অভিজ্ঞতা সেটা যাতে ন্যাশন বিল্ডিং অ্যাকটিভিটিসে প্রতিফলিত হয় এবং জাতি সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকে আমরা প্রস্তাব রেখেছিলাম।
তিনি বলেন, এজন্য ১০০ আসনে উচ্চ কক্ষের আসনের প্রস্তাব করেছিলাম। বিদ্যমান নির্বাচন পদ্ধতিতে যেভাবে নারী আসনে হয়, সেভাবেই নারী আসনের অনুপাতে যাবে। এটা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক। কেউ চান প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে বা পিআর পদ্ধতিতে। কোথাও আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে আসা যায়নি। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন আছে কিনা অনেক দল এমন প্রশ্নও তুলেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্বিতীয় বিষয় ছিল- সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত। বর্তমান সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে সংবিধান সংশোধনীর বিষয় আছে। আর্টিকেল ১৪২ অনুসারে সংবিধান কীভাবে সংশোধিত হবে সেটা বলা আছে। গণভোটের বিধান এজন্যই রাখা হয় যেমন- প্রস্তাবনা সংবিধানের একটি মৌলিক বিষয়। আমরা এভাবে বলেছি, ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যাতে কেউ হাত দিতে না পারে। যদি জুডিশিয়ারিতে জনগণের পক্ষে রায় না আসে যেটা রিভিউতে আছে, তারপরও পার্লামেন্টের ক্ষমতা আছে এটা পুনরায় প্রবর্তন করার। কারণ লেজিসলেচারের ক্ষমতা লেজিসলেচারের।
তিনি আরও বলেন, সমগ্র জাতি যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য লড়াই করেছে, আমরা ধরে নিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায়ও যদি কেউ কখনো পরিবর্তন আনতে চায়, সেটাও যাতে গণভোটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেন, এটা প্রস্তাব করেছিলাম সেটা গ্রহণ হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে চাই না।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে মেজরিটি দল পক্ষে আছে। কোনো এক জায়গায় একটা সলিউশন বের করতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নতুনভাবে ইন্ট্রোডিউস করার প্রস্তাব হচ্ছে। তবে পৃথিবীতে এটা নতুন নয়, বহু দেশে এই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট আছে, চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করার জন্য। আজকে কিছুসংখ্যক দল ছাড়া সবাই আমরা একমত হয়েছি যে দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট চাই।
তিনি বলেন, দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট চায় না, এমন বোধহয় একটি বা দুটি দল বলেছে, আর সবাই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের পক্ষে। তবে কিছুটা ডিফারেন্স হচ্ছে এটা ফরমেশন বিষয় নিয়ে যেমন- কীভাবে এটা ফর্ম করবে এবং এটার ফাংশন কী হবে? সে নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব আসছে। এগুলো কনক্লুড করা হয়েছে। কমিশন সব শুনেছে ও বক্তব্য রেখেছে এবং কমিশন বলেছেন, আগামী রোববার কমিশনই এ বিষয়টা চূড়ান্ত করবে। কমিশন এটা ফাইনাল সিদ্ধান্ত আকারে পেশ করবে, আলোচনা আকারে নয়।
জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, সংবিধান সংশোধন একটু কঠিন করা এবং কোনো একক দল থেকে সংবিধান সংশোধন ইচ্ছেমতো করতে না পারার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব এসেছে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন হোক। নট ফর ওয়ান পার্টি’স পাওয়ার অ্যান্ড পার্টি ইন্টারেস্ট এই থিম ও প্রিন্সিপাল আইডিয়া হচ্ছে কনস্টিটিউশন চেঞ্জ করাটা একটু ডিফিকাল্ট করার জন্য, যেন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সবাই সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়।
নারীদের জন্য ১০০ আসনের পক্ষে একমত জামায়াতে ইসলামী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আমাদের ডিফারেন্ট থিংকিং আছে। নারী আসনে নারীরাই ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। এটা পিআর পদ্ধতিতে যদি হয়, তাহলে এখানে তাদের জন্য এটা সহজতর হবে এবং ভোটার যারা আছে, তাদের জন্যও সহজ হবে। এ প্রস্তাবটি পেন্ডিং আছে। বড় একটি দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচন না চাইলে তা কি আটকে যেতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, না। আমি মনে করি, কোনো একটি বা তিনটি দল না চাইলে আটকে যাওয়াটা ইনজাস্টিস হবে, বৈষম্য হবে। কারণ, মেজরিটি তো পক্ষেই আছে। কোনো এক জায়গায় একটা সলিউশন দিতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আমরা দীর্ঘদিন ধরে মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে কথা বলছি। আজকে সংবিধান সংশোধনীর একটা পযায় পর্যন্ত আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছি। সংসদের যে বর্তমান কাঠামো আছে সেখানে দুই তৃতীয়াংশের মেজরিটিতে সংবিধান সংশোধন হবে। এটা পূর্বেকার নিয়ম। নতুন যে বিষয়টিতে একমত হয়েছি, সংবিধানের বিশেষ বিশেষ আর্টিকেল, প্রস্তাবনাসহ বেশকিছু বিষয়ে গণভোটের মাধ্যমে সংশোধনী আনতে হবে। কিন্তু সংবিধান সংশোধনীর আলোচনায় উচ্চকক্ষের ভূমিকা কী হবে, সেই ব্যাপারটা অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, সব দলই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চায়। বিএনপিও তাদের ৩১ দফাতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছে। এটার গঠন নিয়ে মোটামুটি সব দলের কাছাকাছি মতামত। রাজনৈতিক দলগুলো যারা ভোটে অংশ নিবে তাদের ভোটের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে এবং লোয়ার হাউস (সংসদ) বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় থাকবে। এখানে অনেক দলই একমত। এই ইস্যুতে তিনবার আলোচনা হয়েছে। একটি ইস্যু নিয়ে এতোবার আলোচনা করে যদি কনক্লুশনে আসা না যায়। এক্ষেত্রে অনেকেরই ধৈর্য থাকে না। একই অবস্থা সংবিধানের সংশোধনী নিয়ে। বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণ-অধিকার পরিষদ, গণ-সংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।