
টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদনদীর পানি বেড়ে বন্যা ও জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, যশোর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার ও পার্বত্য এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। বৃষ্টির ফলে অনেক এলাকায় নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। খুলনার কয়রায় তিন হাজার হেক্টর জমির চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, স্থল নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খুলনা বিভাগে আজ মঙ্গলবার প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে গঙ্গা, পদ্মা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ কয়েকটি নদীর পানি বেড়েছে। আগামী এক থেকে তিন দিনের মধ্যে এসব নদীর পানি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, বৃষ্টির কারণে চার জেলার নদীসংলগ্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা আপাতত নেই।
এদিকে, উত্তরাঞ্চলের মহানন্দা নদীর পানি বাড়ছে। করতোয়া, আত্রাই, টাঙ্গন, পুনর্ভবা নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকলেও আগামী কয়েকদিনে তা বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। সিলেট অঞ্চলের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানিও নামছে, যদিও সেখানে চার দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় আজ সকাল থেকে শুরু হয়ে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরের দিকে অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে অনেক এলাকা। মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজে কাজে যেতে দেখা গেছে। সড়কে পানি জমে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
এদিকে উপকূলীয় এলাকায়ও দুর্ভোগ বেড়েছে। লক্ষ্মীপুরের রামগতি-বিবিরহাট সড়ক ধসে পড়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। একই জেলার কমলনগরের ভুলুয়া নদী পুনর্খনন না হওয়ায় ছয়টি গ্রামে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ফেনীর ফুলগাজীর বেশ কয়েকটি গ্রামে বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। গৃহহীন পরিবারগুলো পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ফেনী-৪ বিজিবি ব্যাটালিয়ন মঙ্গলবার ফুলগাজীতে এক হাজার ৫০০ বন্যাদুর্গতকে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করেছে।
অপরিকল্পিত অবকাঠামো ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বেনাপোল স্থলবন্দরেও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। তিন দিনের বৃষ্টিতে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে পানি জমেছে। এতে পণ্য খালাস ও পরিবহন কার্যক্রমে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা। খুলনার কয়রার হরিনগর মৌজার চিংড়ি চাষি আহমেদ সানা বলেন, দুই মাস আগে ভাইরাসে কিছু ক্ষতি হলেও ভাবছিলাম শেষ মুহূর্তে পুষিয়ে নেব। তবে ১০ দিনের বৃষ্টিতে ঘেরের সব মাছ ভেসে গেছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, সাতটি ইউনিয়নের ৫২টি মৌজায় প্রায় চার হাজার চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।