Image description
 

স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে পোশাক শ্রমিক রফিকুল ইসলামের সংসার। রাতভর কাজ শেষে আজ সোমবার সকালে এসে তিনি দেখেন, ঘরের দরজায় তালা দেওয়ায়। তালা ভেঙে দেখেন, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। এ ঘটনা ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার টিঅ্যান্ডটি রোড এলাকার।

নিহত তিনজন হলেন রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা আক্তার (৭) ও ছেলে মো. নীরব (২)। তাঁদের পাশের কক্ষে থাকতেন রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের সেনের গ্রামে। ঘটনার পর থেকে নজরুল পলাতক। পুলিশ নজরুলের কক্ষ থেকে দা উদ্ধার করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে।

আজ দুপুরে ভালুকা থানা চত্বরে বসে রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত ১০টার দিকে তাঁর ভাইয়ের ফোন দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। আজ সকালে বাসায় ফিরে দেখি দরজা বন্ধ, তালা ভেঙে স্ত্রী ও সন্তানের লাশ দেখেন।

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘৪০ হাজার টাকা ঋণ করে ভাইরে জামিনে আনছিলাম। সে মার্ডার মামলায় জেল খাটছে। রিকশা চালাইলেও মাসে ৫-৬ হাজার টাকা কামাইত। একলা সংসারডা টানতে কষ্ট অইত, তাই কামাই বাড়াইতে তাগদা দিতাম। কিন্তু আমার সংসারটা সে কেন শেষ কইরা দিল। আপনা ভাইরে আগলে রাখতে চাইছিলাম, সে–ই আমার সাজানো সংসার তছনছ করে দিল।’

রফিকুল ইসলামের বাসার বাসে ভাড়া থাকেন ছমনা খাতুন (৪০) নামের এক নারী। তিনি স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে রান্নার কাজ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতে বাড়িতে ছিলাম। বৃষ্টির কারণে কোনো শব্দ পাইনি। এমন মৃত্যু দেখে আমরা হতবাক। জীবনে এমন নৃশংস মৃত্যু দেখিনি।’

আজ দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা আছেন। উৎসুক মানুষের ভিড়। নিহত ময়নার বড় বোন নাজমা আক্তার আহাজারি করে বলেন, ‘আমার বইন মারছে, ভাগনি, ভাগনে সবাইরে মারছে। ছোডু বেলায় আমার বাপ মরছে, খুব কষ্ট কইরা আমরা বড় অইছি। আমগোর সন্দেহ তার দেউরে মারছে, আমরা তারা ফাঁসি চাই।’

পুলিশ জানায়, নজরুল ইসলাম গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায় একটি হত্যা মামলায় ২ বছরের বেশি জেলে ছিলেন। আড়াই মাস আগে জামিন মুক্ত হন। বড় ভাই রফিকুল ইসলাম ৪০ হাজার টাকা দাদনে নিয়ে জামিনের ব্যবস্থা করেছিলেন। বড় ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে তিনি অটোরিকশা চালাতেন। বাড়িটির যে কক্ষে নজরুল থাকতেন, সেখানকার খাটের নিচ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ভালুকা পৌর এলাকায় এক ব্যক্তির কাছে সকাল ৮টার দিকে নিজের মুঠোফোনটি বিক্রি করে পালিয়েছেন। মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গফরগাঁও সার্কেল) মনতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘গৃহবধূ ও দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। দা উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করছি, পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। নিহতের দেবরের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, তাঁর সন্ধানে পুলিশ কাজ করছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’