Image description

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী বাবু খান ওরফে 'টুন্ডা বাবু' গ্রেপ্তার হলেও প্রতিশোধের ভয়ে এলাকাছাড়া হয়ে আছেন হাড্ডিপট্টির বহু বাসিন্দা। তারা জানান, বাবু গ্রেপ্তার হলেও আতঙ্ক কাটেনি। তার সহযোগীরা এখনো এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং হুমকি দিচ্ছে।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) গত ২ জুলাই নড়াইল থেকে টুন্ডা বাবুকে গ্রেপ্তার করে। র‍্যাব জানায়, বাবু দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ভূমিদখল, মাদক ব্যবসা এবং সশস্ত্র ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। সে মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী 'কবজিকাটা আনোয়ার'-এর অধীনে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করত।

দারুস সালামের আদাবর ও গাবতলীর সংযোগস্থলের পাশে খালের ধারে অবস্থিত হাড্ডিপট্টিতে প্রায় ৫০০ নিম্ন আয়ের পরিবারের বাস।

মূল ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ মে। সেদিন এলাকাবাসী বাবুর দুই সহযোগীকে মাদকসহ ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এর জেরে পরদিন ৩১ মে বাবুর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকাবাসীর বাড়িঘর ও দোকানে হামলা চালায়। এ সময় মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হলে প্রায় ২০০ জন বাসিন্দা একত্রিত হয়ে গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে ধরে গণপিটুনি দেন। এতে ওই দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এই ঘটনার পর থেকেই টুন্ডা বাবুর প্রতিশোধের ভয়ে এলাকা ছাড়তে শুরু করেন বাসিন্দারা। তাদের ভাষ্য, বাবুর লোকজন গত কয়েকমাস ধরেই এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছেন। তারা নারীদের হয়রানি ও পথচারীদের ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাড্ডিপট্টির ৩৮টি বাড়ির বেশিরভাগই এখন খালি। এলাকার মুদি দোকানি আলাউদ্দিন বলেন, মজুমদার ভিলা নামের এই দোতলা বাড়িতে ৫০টি পরিবার থাকত। ঘটনার পর সবাই পালিয়ে গেছে। আগে প্রতিদিন আমার দোকানে ৮-১০ হাজার টাকার বিক্রি হতো, এখন দুই হাজার টাকাও হয় না। এলাকার ৭৫ শতাংশের বেশি বাড়ি এখন খালি।'

আরেক বাসিন্দা ও নির্মাণশ্রমিক আবু কালাম আজাদ (৪৫) বলেন, 'আমি আগে রাতে কাজ করতাম। কিন্তু এখন সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমি এখন দিনের বেলায় কাজ করি।

একটি তিনতলা ভবনের ব্যবস্থাপক ফরিদুল ইসলাম জানান, তার ভবনে ৪০টি পরিবার থাকত, এখন মাত্র আটটি পরিবার আছে। তিনি বলেন, দিন দশেক আগে টুন্ডা বাবু তার দলবল নিয়ে এসে বলেছিল, এলাকাবাসী তার অনেক ক্ষতি করেছে। সে আমাদের বলেছে, তোদের একটা সুযোগ দিলাম, আমাকে প্রতিদান দিতে হবে।

টুন্ডা বাবু এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কিন্তু ৫ মে জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জামিনে বের হয়েই সে তার সহযোগীদের মৃত্যুর জন্য এলাকাবাসীকে হুমকি দিতে শুরু করে।

তেরো বছর ধরে এই এলাকায় থাকা মরজিনা বেগম বলেন, 'এলাকার মানুষ ভয়ে অস্থির। কয়েক দিন আগে এক মুদি দোকানির গলায় ছুরি ধরে বাবুর লোকজন জিজ্ঞেস করেছে, কারা তাদের লোককে পুলিশে দিয়েছিল আর কারা বাবুর সহযোগীদের মেরেছে।'

তিনি আরও বলেন, বাবু এখন জেলে আছে, এটা স্বস্তির। কিন্তু সে আগেও যখন জেলে ছিল, তখনো তার বাহিনীর ত্রাস ছিল। আমাদের ভয়, ওরা প্রতিশোধ নেবে।

র‍্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবু স্বীকার করেছে যে সে কবজিকাটা আনোয়ারের নির্দেশে কাজ করত এবং বিভিন্ন অপরাধের জন্য কিশোর গ্যাং ব্যবহার করত। আনোয়ারও বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। বাবুর বিরুদ্ধে ঢাকা শহরের বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ ১০টিরও বেশি মামলা রয়েছে।

র‍্যাব-২-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খালিদুল হক হাওলাদার সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বাবুর গ্যাং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আমরা তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি এবং যেন সহজে ছাড়া না পায় সেই অনুরোধ করেছি।

আতঙ্কে এলাকাবাসীর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবু গ্রেপ্তারের পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আমরা আশা করি, বাসিন্দারা শিগগিরই এলাকায় ফিরে আসবেন।