Image description

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে পাথর মেরে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৪৩) হত্যায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সোহাগকে কংক্রিটের পাথর দিয়ে দিয়ে উপর্যুপরি আঘাতকারী সাদা শার্ট ও জিনস প্যান্ট পরা সেই ব্যক্তিকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি।

গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যার এ ঘটনার পর নিহত সোহাগের বড় বোন বাদী হয়ে ১৯ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৪ ধাপে মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। তারা হলেন— মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১), তারেক রহমান রবিন (২২), আলমগীর (২৮), মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২), টিটন গাজী (৩২), সজীব ব্যাপারী (২৭) ও মো. রাজিব ব্যাপারী (২৫)।

সোহাগ হত্যার সময়ের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজের একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার সময় অর্ধশতাধিক মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে কেউ প্রত্যক্ষভাবে, কেউ পরোক্ষভাবে হত্যায় জড়িত ছিল। তাদের চিহ্নিত করে এর মধ্যে এই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সোহাগের ওপর একাধিকবার কংক্রিটের পাথর মারা সাদা শার্ট ও জিনস প্যান্ট পরা ওই ব্যক্তিকে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি বলে জানায় তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তবে পাথর মারা অপর ব্যক্তি পেস্ট রঙের টি-শার্ট পরা মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) শুক্রবার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোহাগ হত্যায় জড়িত আশেপাশের সবাইকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সনাক্ত এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে ফেলেছে; সেখানে ফুটেজে বড় পাথর মারা ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবে দেখা গেলেও তাকে কেন সনাক্ত করা যাচ্ছে না— বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেউ। ফেসবুকে ফারহান নামে একজন লিখেছেন, এর চেয়েও বড় এবং কঠিন কেস সলভ করে ফেলে পুলিশ; সেখানে এ ধরনের ঘটনা সনাক্ত করতে না পারা দুঃখজনক। আরেকজন লিখেছেন, তদন্তের স্বার্থেও মূল আসামীকে গোপনে রাখা হতে পারে; কারণ এমন নজির অতীতেও দেখা গেছে। আবার মূল আসামীকে গ্রেফতারের নেপথ্যে রাজনৈতিক গন্ধও খুঁজছেন কেউ কেউ।

জানা গেছে, নিহত মো. সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। নিহত সোহাগের বন্ধু মামুন অভিযোগ করে বলেন, গত দুই-তিন মাস ধরে চকবাজার থানা যুবদলের মঈন প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করত সোহাগের কাছ থেকে। সোহাগ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রায় দুই মাস আগে দোকানের সামনে এসে হুমকি দিয়ে যায়—তোকে দেখে নেব। ওইদিন সন্ধ্যায় সোহাগকে একা পেয়ে মঈনসহ ৪-৫ জন মিলে তাকে পাথর দিয়ে আঘাত করে এবং উলঙ্গ করে নির্মমভাবে মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে মূল অপরাধিকে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রশ্ন তুলে বলেন, পুরান ঢাকায় যে ঘটনাটি ঘটে গেছে, যে ছেলেটি মারা গেছে, তার সঙ্গে হয়তো যুবদলের সম্পর্ক আছে। কিন্তু যে খুন করেছে, আমরা যে খবর পেয়েছি, তাকে অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে ধরা হচ্ছে না। ধরা হলো অন্যদের। তাকে আসামিও এখন পর্যন্ত করা হয়নি বোধ হয়। কেন হয়নি, কেন ধরা হচ্ছে না?

তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তো একবারও বলা হয়নি যে অমুককে ধরা যাবে না, তমুককে ধরা যাবে না। একবারও তো এ কথাটি বলা হয়নি। আমরা বরাবর বলে দিয়েছি, একটু আগে আপনাদের সামনে যেটি বলেছি, কেউ অন্যায়কারী হলে আইনের দৃষ্টিতে তার বিচার হবে। দলের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক কিচ্ছু যায়-আসে না। তাকে দল কোনোরকম প্রশ্রয় দেবে না। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে থাকে। তাহলে প্রশাসন ধরছে না কেন তাকে?

গতকাল রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনায় জড়িতদের বিষয়টি নিয়ে সোমবার (১৪) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। আমরা এখন পর্যন্ত ৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে।

কংক্রিটের পাথর মারা ব্যক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কংক্রিটের বোল্ডার ছুড়ে মারা ব্যক্তির নাম-পরিচয় আমরা বিভিন্ন উৎস ও মাধ্যমে বের করার চেষ্টা চলছে। টিটুসহ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়াও সহজ হবে বলে আশা করছি।