
বিশ্ব রাজনীতির উত্তপ্ত আবহে আবারও নতুন করে উঁকি দিচ্ছে বৈশ্বিক সংঘাতের ছায়া। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত উত্তেজনা, ইরান-ইসরায়েলের টানা ১২ দিনের যুদ্ধ এবং গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা—এসব ঘটনার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্বের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও ভূরাজনীতিকে নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে।
এই পটভূমিতে ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে গুরুতর হুমকির মুখোমুখি—এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। সোমবার (১৪ জুলাই) ফরাসি সেনাবাহিনীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি মন্তব্য করেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মাখোঁ ভাষণে বলেন, ‘আমরা এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। বৈশ্বিক রাজনীতি অত্যন্ত জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। ইউরোপের স্বাধীনতা এমন এক হুমকির মুখে পড়েছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনো দেখা যায়নি।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, স্বাধীন থাকতে হলে ভয় পেতে হয়, আর ভয় পেতে হলে শক্তিশালী হতে হয়। তিনি রাশিয়ার আগ্রাসী ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে ‘সাম্রাজ্যবাদী নীতি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা শুধু ইউক্রেন নয়, পুরো ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
ইউরোপজুড়ে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা শঙ্কার মুখে ফ্রান্স তার প্রতিরক্ষা ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। মাখোঁ জানান, আগামী বছর থেকেই ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা বাজেট ৩.৫ বিলিয়ন ইউরো বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে আরও ৩ বিলিয়ন ইউরো যুক্ত হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ফ্রান্সের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল ৩২ বিলিয়ন ইউরো। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা ৬৪ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হবে। তবে বাজেট বৃদ্ধির এই প্রস্তাব এখনো ফরাসি পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই ভাষণটি এসেছে বাস্তিল দিবসের প্রাক্কালে, যা ফ্রান্সের জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মাখোঁ বলেন, বর্তমান বিশ্ব আবারও ‘পারমাণবিক প্রতিযোগিতা ও বড় সংঘাতের’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক ন্যাটো সম্মেলনেও এই উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে। সেখানে সদস্য দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে তাদের বাজেট জিডিপির ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।