
এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটেছে। ১১টি শিক্ষাবোর্ডে গড়ে প্রায় ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এত ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া নিয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়ার মানে ধস নামে। পাশাপাশি করোনার ধাক্কা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে। তবে প্রকৃত মূল্যায়ন হলে এতে ফেলের হার আরও বাড়তো বলেও অনেকের ধারণা।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের মতে, এবারের ফলাফলে যথাযথ মূল্যায়নের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। আগের বছরগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পাসের হার বাড়ানো হতো, যা এবার করা হয়নি।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সামগ্রিকভাবে প্রথম পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের এই চিত্র শিক্ষাখাতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য বিগত দিনে ফল চাতুরিতে জড়িত শিক্ষক, শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে একটি স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য কারিকুলাম তৈরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা নিশ্চিত এবং মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ১০ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের এসএসসি, দাখিল এবং সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা গতবারের চেয়ে অনেক কমেছে। দেশের ৯টি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এবার গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মোট ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন (৭ দশমিক ৩০ শতাংশ)। গতবার ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছিল ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। এবার ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৭ জন বা ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম পাস এবং ৪৩ হাজার ৯৭ জন কম জিপিএ-৫ পেয়েছে। এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন অনেক কমেছে, তেমনি বেড়েছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।
ফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের মহাসচিব জাকির হোসেন আমার দেশকে বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে যে শিক্ষাব্যবস্থা ছিল, তাতে ছাত্রছাত্রীদের পড়ার টেবিলে বসার আকর্ষণ ছিল না। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাসে বসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বর্তমান ফল বিপর্যয়ের প্রধান কারণ ফ্যাসিস্ট সরকারের ওই শিক্ষাব্যবস্থা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। তা না হলে শিক্ষায় যে ধস নেমেছে তা ঠেকানো যাবে না।
সূত্রমতে, ২০১০ সালের পর ২০২১ সালে রেকর্ড ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করে। এই সময়ের মধ্যে ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল সবচেয়ে কম, ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে সেটাও ছিল এবারের চেয়ে অনেক বেশি।
এবার সবচেয়ে বেশি পাস করেছে রাজশাহী বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে বরিশাল বোর্ডে ৫৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকেও শীর্ষে রাজশাহী। ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর সবচেয়ে কম জিপিএ-৫ পেয়েছে মাদরাসা বোর্ডে ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে সব বোর্ড মিলিয়ে এবারও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। এবার ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি পাস করেছে এবং ৮ হাজার ২০০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এবার মোট ৩০ হাজার ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ৯৮৪টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস এবং ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি। গতবার ২৯ হাজার ৮৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে শতভাগ পাস করেছিল ২ হাজার ৯৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আর শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ৫১টি। এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২৭টি বাড়লেও কেন্দ্র সংখ্যা ৮৫টি কম ছিল।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন। গতবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬৬ জন (৩ দশমিক ১৬ শতাংশ)। গতবার পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯৪৮ জন (৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ)। গতবার পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
সব বোর্ডের ফলাফলে দেখা গেছে, তুলনামূলক গণিতে কম পাস করেছে। ঢাকা বোর্ডে বাংলায় ৯৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ইংরেজিতে ৮৭ দশমিক ৮৫ এবং গণিতে ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। রাজশাহীতে বাংলায় ৯৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯৩ দশমিক ১০ শতাংশ, গণিতে ৮৬ দশমিক ৫২ শতাংশ পাস করেছে।
এ ছাড়া এবার ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করলেও বাস্তবে অংশ নেয় ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। অর্থাৎ ৩২ হাজার ৪৯৩ জন অনুপস্থিত ছিল।
এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কম হলেও তা যথাযথ মূল্যায়নের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। তিনি বলেন, এবার খাতা দেখার ক্ষেত্রে আমাদের ওপর থেকে কোনো নির্দেশনা বা চাপ ছিল না। আমরাও বিশেষ কোনো নির্দেশনা দিইনি। তবে আমরা পরীক্ষকদের সময় দিয়ে যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়নের কথা বলেছি। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবারের ফলাফলে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের বছরগুলোতেও পরীক্ষকদের কাছ থেকে যে ফলাফল আসত তাই প্রকাশ করত শিক্ষা বোর্ড।
জানা গেছে, রাজধানীর নামি স্কুলগুলোতেও এবার অনেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে। এজন্য স্কুলে লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
সূত্রমতে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার ২ হাজার ৬৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৪ জন ফেল করেছে। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৪ হাজার ১৩৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪১ জন ফেল করেছে। পাসের হার ৯১ দশমিক ৭৮। আগের বছরও ১৭০ জন ফেলসহ পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ ছাড়া ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ২ হাজার ১১৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫ জন ফেল করেছে। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এসএসসিতে ফল বিপর্যয়ে গভীর উদ্বেগ, হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু। আমার দেশকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, স্কুলে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম চালালে কোনো শিক্ষার্থীর ফেল করার কথা নয়। তা ছাড়া টেস্ট পরীক্ষায় কেউ ফেল করলে তাকে পরীক্ষার হলে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিগত সরকারের সময় শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। একদিকে মানহীন, ভুয়া সনদধারীদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে ক্লাসে ঠিকমতো পড়ালেখা করানো হয়নি। শিক্ষকরা স্কুলের ক্লাসকে চাকরি হিসেবে নিয়ে প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্যে বেশি মনোযোগ দেন। এবারের ফল বিপর্যয় বিগত দিনেরই ধারাবাহিকতা।
জিয়াউল কবির আরো বলেন, বিগত ১৬ বছর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে খাতায় বাড়তি নম্বর দিয়ে পাসের হার বেশি দেখানো হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো শিক্ষককে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তাই এই ফল চাতুরির সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মাদরাসা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে ফরিদপুরের সবজাননেসা মহিলা কামিলা (এমএ) মাদরাসার অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস আলমগীর হোসাইন আমার দেশকে বলেন, বিগত সরকারের সময়ে স্থায়ী ও সুন্দর একটি কারিকুলাম দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছে। হযবরল কারিকুলাম নিয়ে স্রোতের প্রতিকূলে চলার চেষ্টা করা হয়েছে। আগস্টের বিপ্লবের পর যে কারিকুলাম চালু হয়েছে তারও প্রভাব পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর। নানা কারণে বিগত সময়ে ঠিকমতো ক্লাস হয়নি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে স্থির থাকতে পারেননি। পরীক্ষা গ্রহণ ও খাতা দেখার ক্ষেত্রে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও পরীক্ষকরা কঠোর হলে এবারের ফলাফল আরো খারাপ হতো-এমনকি পাসের হার ৫০ শতাংশের বেশি হতো না।
এই অধ্যক্ষ বলেন, মাদরাসার স্বীকৃতি ও শিক্ষকদের বেতন রক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষায় মিনিমাম শিক্ষার্থী ও পাসের হার নির্ধারণ করা থাকে বোর্ডের পক্ষ থেকে। এই বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক মাদরাসায় টেস্টে ফেল করা, এমনকি টেস্ট পরীক্ষা না দেওয়া শিক্ষার্থীকেও পরীক্ষায় হলে পাঠানো হয়। এতে ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ভালো ফলের জন্য স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য একটি কারিকুলাম ও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা নিতে হবে।
এত ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও শতভাগ পাস করেছে কুষ্টিয়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এই ভালো ফলের রহস্য ও অন্যদের বিপর্যয়ের কারণ প্রসঙ্গে স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, কিছু স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় অনেকে পাস না করলেও অভিভাবকদের চাপে এসএসসি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। অনেক স্কুলে বিষয়ভিত্তিক বিশেষ করে ইংরেজি বা গণিতের শিক্ষক নেই। আগের নিয়োগ পদ্ধতিতে সমস্যা থাকায় অন্য বিষয়ের শিক্ষকরা ইংরেজি বা গণিত ক্লাস নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা দুর্বল হয়। ক্লাসে ঠিকমতো লেখাপড়া না হওয়ার পেছনে শিক্ষকদের কিছুটা সমস্যার পাশাপাশি অন্য সমস্যাও আছে। যেমন শিক্ষার্থীদের কোনো শাসন ক্ষমতা নেই স্কুল শিক্ষকদের। এতে পড়া আদায়ের সুযোগ থাকে না।
ভালো ফল প্রসঙ্গে এই শিক্ষক বলেন, আমরা নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় কঠোরতা দেখাই। এখানে মানসম্মত প্রশ্ন তৈরি ও যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়। টেস্ট পরীক্ষার খাতাও ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ থাকলে শতভাগ পাস সম্ভব।
বিগত দিনের খাতায় বাড়তি নম্বর দেওয়ার প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরীক্ষক বলেন, এসএসসির খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আগে হেড এক্সামিনারদের বোর্ডে ডেকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হতো যে, রেজাল্ট যাতে ভালো হয়, সেভাবে নম্বর দিতে হবে। কেউ বেশি নম্বর না দিলে পরীক্ষকের নামের পাশে লাল দাগ দিয়ে পরবর্তী বছর তাকে খাতা দেওয়া হতো না। এমনকি কেউ কম নম্বর দিলে আবার খাতা দেখানো হতো। এবার এ ধরনের কোনো নির্দেশনা ছিল না। তবে আগের ধারাবাহিকতা কিছুটা বজায় ছিল। তা না হলে যথাযথভাবে দেখলে পাস আরো কম হতো।
এদিকে দ্রুত ফলাফল দেওয়ার তাড়ার কারণে কম সময়ে পরীক্ষার খাতা ভালোভাবে মূল্যায়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পরীক্ষকরা। তারা বলেন, আগে তিন মাস পর ফল প্রকাশ হতো। আওয়ামী আমলে দুই মাসের মাথায় ফল প্রকাশের নিয়ম করায় একজন পরীক্ষককে কয়েকশ খাতা দেখতে ১০-১৪ দিন সময় দেওয়া হয়। এর মধ্যে খাতা দেখা ছাড়াও ওএমআর পূরণসহ অন্য কাজে সময় যায়। তা ছাড়া তার নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম শেষে তড়িঘড়ি করে এত খাতা ঠিকমতো দেখা সম্ভব হয় না।
ফল বিপর্যয়ের অন্য কারণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বোর্ড স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি হয় না। মূল্যায়নও করা হয় ইচ্ছামতো। পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ঠিকমতো প্রস্তুত করা হয় না। দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষকের অভাব আছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যে কারণে তারা ক্লাসে ঠিকমতো পড়াতে বা সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন না। বাজারের বিভিন্ন নোট-গাইড বইগুলোও খুব নিম্নমানের। যে কারণে প্রশ্নের মানসম্মত উত্তরও খুঁজে পায় না শিক্ষার্থীরা। তা ছাড়া মোবাইল আসক্তি ও সামাজিক অবক্ষয়সহ নানা কারণে শিক্ষার্থীদের যথাযথ পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায় বলে মনে করেন অনেকে।