Image description

রাজধানী ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পাথর মেরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। ঘটনাটি বুধবারের এবং এ ঘটনায় মামলা হয়েছে বৃহস্পতিবার। তবে বীভৎসতার দিকটি সামনে আসে শুক্রবার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার মধ্য দিয়ে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিটফোর্ডের নৃশংস খুনের পেছনে ৫টি কারণ রয়েছে। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার, টাকা লেনদেন, পণ্য ক্রয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দোকান দখলকে কেন্দ্র করে সোহাগ খুন হয়েছেন। গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ওই এলাকায় ভাঙারির ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ওই দ্বন্দ্ব দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। ওই দুটি গ্রুপ হচ্ছে নিহত সোহাগ ও মহিন গ্রুপ। তবে মহিন গ্রুপের পাল্লা ভারী হওয়ার কারণে সোহাগ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন।

মহিন তাকে অন্য এলাকায় গিয়ে ব্যবসা করার জন্য বলতেন। কিন্তু, সোহাগ রাজি হননি। পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ২ মাস থেকে সোহাগকে তার দোকানটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন মহিন। গত রোববার দোকান ছাড়ার জন্য ৪ নম্বর রজনী বোস লেনের সোহানা মেটাল নামক দোকানে সোহাগকে হুমকি দিয়ে আসে মহিন। মহিনের সঙ্গে আরো ৪ জন যুবক ছিলেন। যদি দোকান না ছাড়া হয় তাহলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সোহাগ বিষয়টি পরিবারকে জানিয়েছিলেন যে তিনি থানায় জিডি (সাধারণ ডায়রি) করবেন। কিন্তু, জিডি করার আগেই তাকে নৃশংস খুনের শিকার হতে হলো।

সোহাগের বন্ধু তানভীর জানান, সোহাগকে দোকান ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়েছিল মহিন। দোকান না ছাড়লে তাকে প্রত্যেক মাসে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু, সোহাগ রাজি হননি। পরে মহিনের লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

তিনি আরো জানান, এই বিরোধটি স্থানীয়ভাবে একাধিক এলাকার শীর্ষ ব্যক্তিরা মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিলেও কোনো সুরাহা হয়নি। দুই পক্ষেরই জেদ চেপে বসে। এছাড়াও মহিনের লোকবল বেশি থাকায় কোনো আপস করতে চায়নি।

রজনী বোস লেনের আরেক ভাঙারি ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম জানান, পুরান ঢাকার মধ্যে অন্যতম ভাঙারির আড়ৎ হচ্ছে রজনী বোস লেন (চায়না পট্টি)। এখানে মাসে কোটি কোটি টাকার পাইকারি আমদানি ও রপ্তানি হয়ে থাকে। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বড় সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেটে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে থাকে। তাদের টাকা না দিলে তারা চোরাই মাল হিসেবে ভাঙারি জব্দ করে নিয়ে যায়।

নিহতের ভাগ্নি সাদিয়া আক্তার মীম গতকাল বিকালে আমার দেশকে তার কেরানিগঞ্জের জিঞ্জিরার বাসায় জানান, তার মামার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মহিন, আনোয়ার, কাইয়ুমসহ আরো অনেকেই জড়িত আছে। কিন্তু, ব্যবসায়িক বিরোধ ও টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র তার মামাকে খুন করা হয়েছে। ওই খুনে পুলিশ মামলার এজাহারনামা উল্টাপাল্টার অভিযোগ করেন তিনি।

সরেজমিনে আরো জানা গেছে, সোহাগকে যখন একের পর এক আঘাত করা হচ্ছিল তখন কিছু লোকজন আনসার সদস্যদের জানিয়েছিল। কিন্তু তারা এগিয়ে আসেনি। মূল সড়কে কিছু পুলিশের মোবাইল পার্টি অবস্থান করছিল। তাদেরও জানিয়েছিল পথচারীরা। কিন্তু খবর পেয়ে ত্বরিতগতিতে পুলিশ সেখানে যায়নি।

জানা গেছে, সোহাগকে যখন পাথর দিয়ে মারা হচ্ছিল তখন কোনো পথচারী হামলার ভয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস করেনি। কারণ, হামলায় অংশ নেওয়া সাদা পোশাকধারী এক যুবক ওই গেটের রাস্তা থেকে লোকজন সরাচ্ছিল। আর সবাইকে হুমকি দিচ্ছিল।

এদিকে, গতকাল বেলা ৩টার দিকে সরেজমিনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে ওই স্থানে তাকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত হওয়া পাথরটি পড়ে আছে। লোকজন সেখানে ভিড় করছেন। কাউকে আবার ভিডিও করতে দেখা গেছে। হাসপাতালে আসা পুরান ঢাকার রোগীরা বেশিরভাগ সময় ৩ নম্বর গেটটি ব্যবহার করে থাকেন। ওই গেট দিয়ে যারাই প্রবেশ করছেন তাদের অধিকাংশই হত্যাকাণ্ডের ওই স্থানে জটলা করছেন। সেখানে অতিরিক্ত দুই পুলিশ সদস্যকে ডিউটি করতে দেখা গেছে। লোকজনকে সরাতে আনসার সদস্যরা সক্রিয় ছিল।

সরেজমিনে জানা গেছে, ওই এলাকায় সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানির ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ে আছেন। স্থানীয় অনেক রাজনীতিবিদ গা-ঢাকা দিয়েছেন। অনেকেই এলাকা থেকে সাময়িকভাবে চলে গেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে, রজনী বোস লেন (চায়না) মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙারি দোকানিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ কেউ আবার সাময়িকভাবে দোকান বন্ধ করে রেখেছেন। হত্যাকাণ্ডের পর সোহাগের দোকানটি তালা মারা রয়েছে। সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে রজনী রোসের স্থানীয় অন্য দোকানিরা একটি মিছিল বের করেছেন। অ্যালুমনিয়াম ব্যবসায়ী রেজাউল হোসেন জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাই। আমরা পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাই।

ভিকটিমের ভাগ্নি মীম জানান, মামলার প্রথম এজাহার আমরা দেখেছি। ওই এজাহারে কাইয়ুম, রাকেশ ও আনোয়ারের নাম ছিল। কিন্তু ওই তিনজনকে বাদ দিয়ে নিরীহ মিজান, অপু দাস ও হিম্মতকে ঢোকানো হয়েছে। পুলিশ তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পুলিশের ব্রিফিং, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে খুন হন সোহাগ : পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) খুন হয়েছেন এখানে কারা ব্যবসা করবে এবং ভাঙারি ব্যবসার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে। হত্যার শিকার সোহাগ ও হত্যাকারীদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। মূল পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল হাসান মহিনের সঙ্গে নিহত সোহাগের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঁদাবাজির তথ্য এখনো পর্যন্ত পায়নি পুলিশ।

গতকাল শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। লালবাগ ডিসি বলেন, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করে এ পর্যন্ত এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, আসামিরা এবং নিহত ব্যবসায়ী সোহাগ একসঙ্গে কিছুদিন ব্যবসা করেছেন। যখন ব্যবসার লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় তখনই তারা বিবাদে লিপ্ত হন এবং একে অপরের শত্রুতে পরিণত হন। এর ফলে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি (লালবাগ) বলেন, ঘটনা ঘটার দশ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সঠিক নয়। ঘটনার পর থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় আমি উপস্থিত ছিলাম। ব্যবসায়ী সোহাগের কাছে আত্মীয় খুঁজে পেতে এবং বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে সময় লেগেছে। তিনি বলেন, প্রথমে নিহত সোহাগের স্ত্রী পরিচয়ে একজন মামলা করতে চাইলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জানা গেলে ওই নারীর সঙ্গে সোহাগের ডিভোর্স হয়েছে।

সোহাগের বাবা-মায়ের খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তারা কেউ বেঁচে নেই। সোহাগের সৎভাই রয়েছেন। কিন্তু আপন ভাই না থাকায় আমরা সৎভাইকে বাদী করতে চাইনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এর আগে পাশের এলাকায় একটি খুনের ঘটনায় নিহতের সৎভাই মামলা করেন। এক পর্যায়ে নিহতের সৎভাই আসামিদের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করে, মামলা বিক্রি করার মতো অবস্থা। সর্বশেষ আমরা নিহত সোহাগের বোনকে খুঁজে বের করে তাকে মামলার বাদী হতে অনুরোধ করি।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, গত ৯ জুলাই বুধবার বিকেল অনুমান ৬টার দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তী সময়ে ১০ জুলাই উক্ত ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

গত ১১ জুলাই শুক্রবার পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত আসামি তারেক রহমান ও রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে দুজনকে। এরা হলো- আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫)। শুক্রবার রাত আনুমানিক ১২.৩০টায় সোহাগ হত্যার ঘটনায় মো. টিটন গাজী (৩২) নামে আরো এক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

জানা যায়, এ ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল রহস্য উদঘাটন, সংশ্লিষ্ট সব অপরাধী গ্রেপ্তার এবং ভিকটিম কেন এই ঘটনার শিকার হলো তা উদঘাটনের জন্য একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে। ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে উক্ত ঘটনা সংঘটিত হয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, র‌্যাব মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান বলেছেন, অপরাধী যে দলেরই হোক, যত প্রভাবশালীই হোক, কোনো ছাড় নেই। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। অপরাধী কোন দলের কোন মাপের নেতা, সেটা আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের কাছে অপরাধীর পরিচয় শুধুই অপরাধী। গতকাল শনিবার দুপুরে কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বাহিনীটির মহাপরিচালক। পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় একজন ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে খুন করাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় র‌্যাবের কার্যক্রম তুলে ধরতে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। র‍্যাব প্রধান বলেন, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে দুজনকে র‍্যাব ও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মব ভায়োলেন্সে জড়িত না হতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনাটির ছায়া তদন্তের মাধ্যমে ডিএমপিকে সহায়তা করছে র‍্যাব। জড়িত সবাইকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা যাবে।

আসামির স্বীকারোক্তি ও রিমান্ড : রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল- মিটফোর্ডের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংস হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. টিটন গাজীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিব উল্লাহর আদালত তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করে। এছাড়াও এদিন ভাঙারি ব্যবসায়ী হত্যা মামলার অপর আসামি তারেক রহমান রবিন অস্ত্র মামলায় নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

শনিবার রিমান্ড শেষে আসামি তারেককে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয় তারেক। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক মো. মনির তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আদালত তারেকের জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

অপরদিকে, ভাঙারি ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় পিয়াসকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবউল্লাহ তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে, শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি থানার জিন্দাবাহার এলাকা থেকে মো. টিটন গাজীকে আরেক আসামিসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে প্রধান সন্দেহভাজন মাহমুদুল হাসান মহিন এবং তারেক রহমান রবিনকে কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা ও অস্ত্র আইনের পৃথক দুই মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গেটের কাছে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে থেতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এরপর নিথর মরদেহ টেনে সড়কের মাঝে নিয়ে আসে হত্যাকারীরা। সেখানে মরদেহের উপর লাফিয়ে উঠে উল্লাস প্রকাশ করে ঘাতকরা। এ ঘটনায় তার বড় বোন বাদী হয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

গত ৯ জুলাই বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে পাথর দিয়ে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করে। এ ঘটনার ভিডিও সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি করে।