Image description

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালের ৬ জুলাই বাংলাদেশের সংগীত জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তী শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত এই মহানায়ক তার অনবদ্য সুরের জাদুতে কোটি মানুষের হৃদয়ে এখনো বেঁচে আছেন। 

দেখতে দেখতে তার প্রয়াণের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও তার গান আজও সমানভাবে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে চলেছে। ২০২০ সালের ৬ জুলাই, সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন বাংলা গানের উজ্জ্বল নক্ষত্র এন্ড্রু কিশোর। 

তার মৃত্যুতে দেশের সংগীত অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তবে এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যু হলেও, তার সৃষ্টিকর্ম তাকে অমর করে রেখেছে।

এক প্লেব্যাক সম্রাটের উত্থান

এন্ড্রু কিশোরের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে। ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল তার প্রবল ঝোঁক। আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে সংগীতে প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন তিনি। তার সংগীত জীবনের শুরু হয় রাজশাহী বেতারে। তবে ১৯৭৭ সালে মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানটি দিয়ে প্লেব্যাকে তার অভিষেক ঘটে। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

এক দশক ধরে এন্ড্রু কিশোর বাংলা চলচ্চিত্রের গানে একচেটিয়া রাজত্ব করেছেন। ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ হিসেবে তার পরিচিতি সর্বজনীন। তার কণ্ঠে গাওয়া হাজারো গান আজও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে।

রোমান্টিক, বিরহ, দেশাত্মবোধক—সব ধরনের গানেই তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। তার গায়কীর স্বতন্ত্র ভঙ্গি তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। তিনি আটবার শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন, যা তার শিল্পী জীবনের এক বিশাল অর্জন।

স্মৃতির ফ্রেমে এন্ড্রু কিশোর

এন্ড্রু কিশোর শুধু একজন শিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিনয়ী ও সজ্জন ব্যক্তি। সহকর্মী ও ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়। তার প্রয়াণের পর দেশের গুণী শিল্পী ও কলাকুশলীরা গভীর শোক প্রকাশ করেন। এন্ড্রু কিশোরের অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে, যার মধ্যে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘আমার সারা দেহ খেওগো মাটি’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি আমার জীবন’, ‘পড়ে না চোখের পলক’ উল্লেখযোগ্য। এসব গান বাংলা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে।

আজও অমলিন তার সুর

এন্ড্রু কিশোরের প্রয়াণের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও, তার গান আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গানের আলোচনা, পুরনো ভিডিও ক্লিপের শেয়ার, এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের কণ্ঠে তার গান পরিবেশনা—এসবই প্রমাণ করে যে, এন্ড্রু কিশোরের সংগীত আজও মানুষের হৃদয়ে কতটা গভীরভাবে প্রোথিত। তার সুর, তার কণ্ঠের যাদুতে তিনি চিরকাল বাংলা সঙ্গীত প্রেমীদের মনে বেঁচে থাকবেন।

অ্যান্ড্রু কিশোরের মতো শিল্পীরা যুগে যুগে জন্ম নেন না। তিনি ছিলেন এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা, যিনি তার সংগীত দিয়ে বাংলা সংস্কৃতিকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তার প্রয়াণ এক অপূরণীয় ক্ষতি হলেও, তার সৃষ্টিকর্ম তাকে অমর করে রেখেছে। বাংলা গানের আকাশে তিনি এক ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলজ্বল করবেন চিরকাল।