
ভূমিহীন জীবন থেকে দোতলা বাড়ির মালিক—শুধু কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরেই এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার কোলা গ্রামের সাইফুল ইসলাম।
এক সময় ছিলেন পুরোপুরি নিঃস্ব। সংসার চালানোর সামর্থ্যও ছিল না। তখনই এক সময় শাশুড়ি একটি শাড়ি ও একটি ভ্যান কিনে দেন তাকে। সেই ভ্যানই হয়ে ওঠে তার জীবনের মোড় ঘোরানো বাহন।
“ভাড়া মারতাম ওই শ্মশানের রাস্তা। তখন কেউ চিনতো না। আস্তে আস্তে মিশে গেছি সবার সাথে। এখন সবাই টানে আমাকে,” স্মৃতিচারণ সাইফুলের।
সকাল ফজরের নামাজের পর থেকেই শুরু হতো তার দিনভর পরিশ্রম। রাতে কখনো ১২টা, কখনো ১টা, এমনকি ৩টা পর্যন্ত কাজ করতেন। অনেক দিন না খেয়েই চলতে হতো, কিন্তু পিছু হটেননি একটিবারও।
প্রথমদিকে ধানপট্টি, মালপত্র আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। সেই সূত্রেই পরিচয় হয় বাজারের দোকানিদের সঙ্গে। পরে দোকানে মাল সরবরাহের লিভারির কাজও করতে থাকেন। ক্রমেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলেন একজন নির্ভরযোগ্য শ্রমিক হিসেবে।
এক সময় বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল স্ত্রী কাকুলি খাতুনকে বিয়ে করার পর। সেখান থেকেই ভিতরে জন্ম নেয় প্রতিজ্ঞা—“কিছু একটা করে দেখাবো”। সেখান থেকেই তার সংগ্রামী যাত্রার শুরু।
“মনের ভিতরে ছিল সবসময়—যখন চলেই এসেছি, আর ফিরে যাবো না। আমি বাজারেই বাড়ি করব, বড় কিছু করে দেখাবো।”
স্কুলে কখনো যাননি। তবে শিক্ষা পেয়েছেন বাবামায়ের কাছ থেকে—“কোনো কাজ ছোট না, পরিশ্রমই জীবনের মূল চাবিকাঠি।” ছয় ভাই তিন বোনের গরিব পরিবারে বেড়ে ওঠা সাইফুল জীবনের প্রতিটি বাঁকে লড়াই করেছেন মাথা উঁচু করে।
নিজে পড়াশোনা না করলেও, ছেলেকে কলেজে পড়াচ্ছেন। ছেলে মাঝে মাঝে ভ্যানের কাজে সাহায্য করে। সাইফুল বলেন, “ছেলের চাকরি হলে আমি একটু বিশ্রাম নেবো।”
কঠোর পরিশ্রমের টাকা জমিয়ে একসময় জমি কেনেন। ৫০,০০০ টাকা শতক দরে জমি কিনে গড়ে তোলেন দোতলা বাড়ি। সাইফুল এখন এলাকায় এক অনুকরণীয় নাম।
“যারা অন্ধকারে শামিল, সাইফুল তাদের দেখিয়েছেন আলোয় ফেরার পথ।” —স্থানীয় এক বাসিন্দা।
তিনি ধূমপান করেন না, চা-কফি খেতে পছন্দ করেন না, বসে থাকেন না। কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন না। এমন পরিশ্রমী, বিনয়ী ও সৎ একজন মানুষ যে ভাগ্যের বদল ঘটাতে পারেন—সাইফুল ইসলাম তার জীবন্ত প্রমাণ।