Image description

পাসপোর্ট নবায়নের জটিলতায় মালয়েশিয়ায় বসবাসরত লক্ষাধিক বাংলাদেশি প্রবাসী চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আবেদন করে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও অনেকেই হাতে পায়নি নতুন পাসপোর্ট।

এর মধ্যে অনেকের বৈধতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বা শেষ হওয়ার পথে। এতে করে তাদের চাকরি, বসবাস ও চলাফেরায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। বৈধতা হারিয়ে আটকে পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন তারা। ফলে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশি কর্মীদের বড় এই শ্রমবাজার।

প্রবাসীদের অভিযোগ, আবেদন গ্রহণের পর এক-দেড় মাস সময় দিলেও তিন-চার মাস চলে যায়। এরপরও পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয় না। এজন্য অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়ের অভাব এবং বাংলাদেশ দূতাবাসকে দায়ী করেন তারা। প্রশ্ন তোলেন সেবার মান নিয়েও। ভুক্তভোগীদের দাবিÑএ জটিলতা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যাতে তারা নিশ্চিন্তে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রবাসজীবন কাটাতে পারেন।

জানা যায়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের সুবিধার্থে গত বছরের এপ্রিলের ৪ তারিখ ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এতে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন সরকার অনুমোদিত আউটসোর্সিং কোম্পানি এক্সপাট সার্ভিসেস কুয়ালালামপুরকে (ইএসকেল) পাসপোর্ট তৈরির কাজ হস্তান্তর করে।

নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ফি দিতে হয় ১৯৬ রিঙ্গিত অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি করলে ৩০৪ রিঙ্গিত অর্থাৎ প্রায় ৯ হাজার টাকা। কিন্তু নির্ধারিত ফি পরিশোধ করেও সময়মতো পাসপোর্ট না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এতে খরচ দ্বিগুণ বাড়লেও মিলছে না নিশ্চয়তা। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী প্রবাসীরা একদিকে যেমন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া পাসপোর্ট নবায়নে জটিলতা থাকায় গ্রেপ্তার এড়াতে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন থেকে স্পেশাল পাস পেতে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৩০০ রিঙ্গিত গুনতে হচ্ছে।

দূতাবাস বলছে, ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর তা প্রসেস করতে মাস দেড়েক সময় চলে যায়। তবে নাম আর বয়স নিয়ে জটিলতায় অনেকের আবেদন কিংবা পাসপোর্ট তৈরিতে সময় বেশি লাগছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যখনই পাসপোর্ট তৈরি করে পঠিয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে তারা বিতরণ করেন।

তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তর বলছে, মিশন থেকে পাসপোর্টের আবেদনগুলো সমাধান করে অনুমোদন না করা পর্যন্ত অধিদপ্তর হতে পাসপোর্ট প্রিন্ট করা সম্ভব নয়। তাই তাদের কাছে সময় বেশি লাগার সুযোগ নেই। তবে পাসপোর্ট সেবার মান বৃদ্ধির জন্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে তিন-ছয় মাসের জন্য অফিস স্থাপন করে পরীক্ষামূলকভাবে একটি প্রস্তাব সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ইএসকেল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী ভিসা পেতে পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১৮ মাস থাকতে হবে। অথচ অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাসপোর্টের মেয়াদ দুই-তিন মাস থাকতে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। এক্ষেত্রে দেখা যায়, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং তখন নানাভাবে নতুন পাসপোর্ট করার জন্য তোড়জোড় শুরু করেন।

তথ্যমতে, ই-পাসপোর্ট প্রকল্প থেকে চলতি বছরের জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত প্রাপ্ত পেন্ডিং স্ট্যাটাস পর্যালোচনায় কুয়ালালামপুর মিশনে মোট ২২ হাজার ৮২০টি আবেদনপত্র রয়েছে, যা ইতোমধ্যে চালু হওয়া ৫৯টি বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া চার হাজার ৮৪৩টি তৈরি ই-পাসপোর্ট বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে।

আবুল হোসেন নামের একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী আমার দেশকে জানান, জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখে তিনি ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর এখনো পাসপোর্টের কোনো খবর নেই। তিনি বলেন, পাসপোর্ট সম্পর্কে জানতে আমাকে প্রত্যেক মাসে দুইবার কাজ রেখে আসা লাগে ইএসকেল এবং দূতাবাসে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। এদিকে ভিসার মেয়াদও চলে গেছে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন থেকে স্থানীয় এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় ৯ হাজার টাকা দিয়ে মাসিক স্পেশাল পাস নিয়ে চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কামলা মানুষ। আমাদের এরকম হয়রানি এবং আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলা ঠিক হচ্ছে না।

বিল্লাল হোসেন নামের আরেক প্রবাসী বলেন, আমি মার্চের ১৭ তারিখ ব্যাংকে টাকা পেমেন্ট করে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো পেন্ডিং দেখাচ্ছে। এদিকে একই কোম্পানির আমার পরিচিত চার-পাঁচজনেরও একই অবস্থা। তিনি বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ আগামী সপ্তাহে চলে যাবে। আর সঙ্গের যারা তাদের মেয়াদ চলে গেছে। স্পেশাল পাস নিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের। পাসপোর্ট দ্রুত না পেলে যে কোনো সময় পাস বাতিল করে আমাদের দেশে পাঠিয়ে দেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, বাংলাদেশি প্রবাসীরা পাসপোর্ট নবায়নের জন্য এমন সময় আসেন, যখন তাদের পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ। এ অবস্থায় আমাদের কিছু করার থাকে না। এ সময় তিনি আরো বলেন, অনেকের আছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে (এমআরপি) নামের বানান একরকম এবং ই-পাসপোর্টে আরেক রকম দিয়ে তারা আবেদন করেন। যার ফলে নবায়নের পুরো প্রসেসে সময় লাগে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর লিখিতভাবে এ প্রতিবেদকে জানায়, কুয়ালালামপুরসহ অন্যান্য মিশনগুলোতে পাসপোর্ট ইস্যুর সব কার্যক্রম মিশনপ্রধানের (রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার) সার্বিক নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এ সময় তারা আরো জানায়, কুলালামপুর মিশনে মোট ২২ হাজার ৮২০টি আবেদনপত্র বিভিন্ন কারণে পেন্ডিং রয়েছে, যা বিদেশে ৫৯টি বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে সর্বোচ্চ। অতিদ্রুত অনিষ্পন্ন আবেদন সমাধান এবং তৈরিকৃত পাসপোর্ট বিতরণ করা সম্ভব হলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে।

অধিদপ্তর থেকে আরো জানানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হচ্ছে মিশনপ্রধানের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ এবং মিশনগুলোর পাসপোর্ট শাখায় অধিদপ্তরের কোনো জনবল কর্মরত নেই। তাই মিশনে প্রবাসীদের পাসপোর্ট সমস্যা লাঘবে অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।