
ঢাকার মগবাজারে আবাসিক হোটেল থেকে এক সৌদি প্রবাসী ও তার স্ত্রী-সন্তানের লাশ উদ্ধারের দুই দিন বাদে হত্যা মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রমনা থানায় এ মামলা করেন প্রবাসীর ভাই নুরুল আমিন।
রমনা থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, এ মামলায় নিহতের চাচাতো চাচা রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত রোববার মগবাজারের আবাসিক হোটেল ‘সুইট স্লিপ’ থেকে আদ-দ্বীন হাসপাতালে নেওয়া হলে সৌদি প্রবাসী মনির হেসেন (৪৮), তার স্ত্রী নাসরিন আকতার স্বপ্না (৩৮) ও তাদের সন্তান আরাফাতকে (১৮) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তাদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামে।
সুরতহাল প্রতিবেদনে তাদের মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়ায় বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সঙ্গে বলা হয়েছে, মরদেহগুলোতে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
মামলা বিবরণ অনুযায়ী, বাদী নুরুল আমিন ইতালিতে, আর তার ভাই মনির সৌদি আরবে থাকেন। কোরবানির ঈদে মনির গ্রামে আসেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় মনির তাদের চাচাত চাচা রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে ঢাকাসহ গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় জমি-জমা ও বাড়ি কেনেন। চাচা রফিকুলই সেসব দেখভাল করছিলেন।
এজাহারে বলা হয়, মনির দেশে আসার পর জমিজমা ও টাকা পয়সার হিসাব নিয়ে রফিকুলের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এর মধ্যে ২৮ জুন মনির ছেলের চিকিৎসার জন্য স্ত্রীসহ ঢাকায় আসেন। তারাসহ ঢাকায় অবস্থান করা চাচা রফিকুল ইসলাম নিউ ইস্কাটন রোডের এসপিআরসি হাসপাতালে যান।
ওইদিন চিকিৎসকের সিরিয়াল না পেয়ে মনির স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মগবাজারের ‘সুইট স্লিপ’ হোটেলে ওঠেন। বিকালে পাশের ‘ভর্তা ভাত’ হোটেলে গিয়ে খাবার খান মনির ও রফিকুল ইসলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মনিরের স্ত্রী ও সন্তানের জন্য খাবার নিয়ে হোটেল কক্ষে যান রফিকুল। এরপর রফিকুল তার বাসায় চলে যান।
মামলায় বলা হয়েছে, চাচা রফিকুলের আনা খাবার মনির ও তার পরিবার খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে তারা বমি করতে থাকেন, তাদের আদ-দ্বীন হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এজাহারে বাদী নুরুল বলেছেন, “আত্মীয়-স্বজনদের নিকট শুনে আমার ধারণা হয় যে, আমার ভাইয়ের সম্পত্তি আত্নসাৎ করার জন্যে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পনা করে তারা (মনির ও তার স্ত্রী-সন্তাস) হোটেলে অবস্থানকালীন তাদের খাবারের সাথে বিষ বা বিষ জাতীয় পদার্থ মিশিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে তাদের হত্যা করেছে।”
সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদের ময়নাতদন্ত করা হয়।
পরে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক জাকিয়া তাসনিম বলেন, পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুনা পরীক্ষার ফল হাতে এলে জানা যাবে, তাদের মৃত্যু খাবারের বিষক্রিয়া থেকে হয়েছে কিনা।
“নমুনাগুলো মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন আসার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে, তারা খাদ্যে বিষক্রিয়ায়, নাকি অন্যকোনো কারণে মারা গেছেন।”