
বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর ব্যবহার করে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মোদি সরকার। এতে ভারতের হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন। পাশাপাশি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরাও। এতে দুই প্রতিবেশী দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা ‘ডিজিএফটি’ এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা ৯ ধরনের বাংলাদেশি পণ্যের মধ্যে রয়েছে—কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, বিশেষ ধরনের কাপড় (পাটজাত) প্রভৃতি। পণ্যগুলো এখন থেকে শুধু সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে ভারতে আমদানি করা যাবে।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক বিধিনিষেধের বিষয়ে নির্দিষ্ট কারণ এখনো বিস্তারিতভাবে জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করাই এ সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য। পণ্যগুলো আমদানির কারণে ভারতের সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল এবং স্থানীয় উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।
এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা গভীর উৎকণ্ঠায় পড়েছেন। এ বিধিনিষেধের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় আমদানি-রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী, পেট্রাপোল কাস্টমস হাউস এজেন্ট বা যারা পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সসংক্রান্ত কাজ করেন- এমন কর্মী, পরিবহন ক্ষেত্র, পেট্রাপোল স্থলবন্দরে লোড-আনলোডের সঙ্গে যুক্ত এক হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন।
গত শনিবার পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী এ ঘটনাকে ‘অনেক বড় ধাক্কা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, পেট্রাপোল স্থলবন্দরের মতো অন্যান্য স্থলবন্দরে কয়েক লাখ মানুষ আমরা যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত, তারা প্রায়ই এ ধরনের ধাক্কা খাচ্ছি। কিছুদিন আগে গার্মেন্টসসামগ্রীতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এবার পাটজাত পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা। পাটজাত পণ্যের বেশিরভাগ শিল্প হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এসব পণ্য মহারাষ্ট্রের নভোসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করে সংশ্লিষ্টরা কতটুকু লাভবান হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
পেট্রাপোল কাস্টমস হাউসের এজেন্ট নূর ইসলাম মণ্ডল বাপি বলেন, বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে দৈনিক কমপক্ষে ১০০ ট্রাক পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে আসত। এবারের নিষেধাজ্ঞায় তাও বন্ধ হয়ে গেল। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টরা বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।
বাংলাদেশের কাঁচা পাট ও পাটের তৈরি বস্তা, সুতা, চট ইত্যাদি ভারতে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হয়। ফলে এ বিধিনিষেধ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপরও একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে। গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও বাতিল করে দিল্লি।