
রাজধানীর সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। দিন দিন বাড়ছে ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ির সংখ্যা। একই সঙ্গে সড়ক, মহাসড়ক, অভিজাত এলাকাসহ নগরীর সব সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা। কার্যত নিষিদ্ধ হলেও সড়কগুলো দখল করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে প্রায় ১২ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা।
এতে বাড়ছে ঝুঁকি, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে সরকারের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৫ হাজার যানবাহনের ফিটনেস সনদ নেই। এর মধ্যে বাসের সংখ্যা ২৪ হাজার ২৬টি, মিনিবাস ১১ হাজার ৭৮৮টি, ট্রাক ৬৬ হাজার ২৬টি, কার্গো ভ্যান ২ হাজার ২৩৪টি, কাভার্ডভ্যান ১০ হাজার ৯১২টি, হিউম্যান হলার ১৪ হাজার ৫৫০টি, পিকআপ ৮২ হাজার ৮০৫টি, স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল ৬ হাজার ১১৮টি, ট্যাঙ্কার ২ হাজার ৩৬৮টি, প্রাইভেট কার ৭৬ হাজার ৫৮টি, জিপ ১৬ হাজার ১৫৩টি ও মাইক্রোবাস ৩২ হাজার ১৫৬টি। সড়কে দেখা যায়, এসব ফিটনেসবিহীন বা লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির কোনোটির লাইট নেই, কোনোটির কাচ ভাঙা, কোনোটির দরজা নেই, মরিচায় আচ্ছাদিত জোড়াতালি দেওয়া বডিও খসে পড়ার উপক্রম। এমন লক্কড়ঝক্কড় পরিবহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানীর প্রতিটি সড়কে। ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো চলার কারণে সড়কে দুর্ঘটনার পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অথচ রাজধানীতে মে থেকে গণপরিবহনের এমন চিত্র আর দেখার কথা ছিল না। গেল বছরের অক্টোবরে ছয় মাস সময় বেঁধে দিয়ে ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। বাস্তবতা হলো- সরকারি ঘোষণা তোয়াক্কা না করেই সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন এ জাতীয় গণপরিবহন। সেবার মানেও কোনো পরিবর্তন না আসার অভিযোগ যাত্রীদের। যাত্রীরা বলছেন, বেশির ভাগ বাসেরই গ্লাস ভাঙা থাকে। বৃষ্টির সময়ে বসা যায় না। এ ছাড়া ফ্যানগুলোও নষ্ট থাকে। গরমে অস্থির হয়ে পড়েন যাত্রীরা। যদি গত ২০ জুন ঢাকা মহানগরী থেকে ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক সরিয়ে নিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ)। তবে ফিটনেসবিহীন পরিবহনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
বিআরটিএর উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিআরটিএ একসঙ্গে কাজ করছে।
এদিকে রাজধানীর প্রধান সড়ক, লিংক রোড, অভিজাত এলাকায় বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার দৌরাত্ম্য। কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীর সড়কগুলো দখল করে চলাচল করছে প্রায় ১২ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব অবৈধ রিকশা মূল সড়কে চলে আসায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটও।
প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও ফ্লাইওভারে পর্যন্ত অবৈধ বাহনটি যখন-তখন উঠে পড়ছে। থেমে নেই অভিজাত এলাকায়ও। গুলশান, বনানী, নিকুঞ্জ ও ধানমন্ডি এলাকায় ব্যাটারি রিকশার আধিপত্য বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান-২ থেকে গুলশান-১ যেতে প্রধান সড়কটিতে দাপিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। কোনো রিকশায় দুজন, কোনোটিতে তিনজন, আবার কোনোটিতে চারজনকে নিয়ে দ্রুতগতিতে যাচ্ছে। প্রতিটি রিকশায় দুজন স্বাচ্ছন্দ্যে বসা গেলেও চার-পাঁচজনকে নিয়েও ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে বাহনটি। দায়িত্বরত পুলিশ থাকলেও তাদের কেউই এ বিষয়টি দেখছে না। যদিও গত ১৯ এপ্রিল গুলশান এলাকা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর নেই। প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে রয়েছে এসব রিকশার আধিপত্য। একই অবস্থা বনানী, নিকুঞ্জ, ধানমন্ডিসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোয়। তবে গত ২ মে নিকুঞ্জ এলাকায়ও ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে স্থানীয় বাসিন্দারা।
শুধু গুলশান, বনানীতে নয়, সারা ঢাকায় তাদের আধিপত্য রয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, বর্তমানে শুধু রাজধানীতে চলছে প্রায় ১২ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে চলছে আরও প্রায় ৬০ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আগামী আগস্ট থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তিন এলাকায় চালু হতে যাচ্ছে ই-রিকশা। এলাকা তিনটি হলো- উত্তরা, ধানমন্ডি ও পল্টন। পর্যায়ক্রমে আরও এলাকায় এটি চালু করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমান যে রিকশাগুলো আছে সেগুলো এখনই উঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। ওই রিকশার পাশাপাশি নতুন ই-রিকশা চলবে। ধাপে ধাপে পুরোনো রিকশা কমিয়ে আনা হবে।