Image description

গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে কিশোর গ্যাংয়ের এক নেতার গুলি ছোড়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

অভিযুক্ত তিহিম মাদবর (১৮) শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধনুয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান জামানের ছেলে বলে জানা গেছে।

শনিবার (২৮ জুন) সকালে এক মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

এদিকে অস্ত্র হাতে ভাইরাল ভিডিও চোখে পড়ার পর শ্রীপুর থানা পুলিশ তিহিমকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে। তবে ভিডিও ভাইরালের পর থেকে তিহিমসহ তার বাবা-মা ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি ওই এলাকারই একটি বাসার ছাদে ধারণ করা। তবে তিহিমের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা গুলি ছোড়ার ভিডিওগুলো শনিবার রাত থেকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। সে তার ওই ফেসবুক আইডি বাদ দিয়ে নতুন নামের আইডি রেখে আগে করা তার সকল পোস্ট সরিয়ে ফেলেছে।

এক মিনিট ২২ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, তিহিম প্রিন্ট কালারের শার্ট গায়ে ডান হাতে পিস্তল নিয়ে একটি বাসার ছাদের উপর হাঁটছে। ছাদের সাইটে গিয়ে হাতে থাকা পিস্তল উপরের দিকে তাক করে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে। আবার এক কালারের শার্ট গায়ে একই বাসার ছাদে পিস্তল ওপরের দিকে তাক করে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে। কিছুক্ষণ পর চেক শার্ট পড়ে ছাদের সাইটে গিয়ে পেছনে প্যান্টে গুঁজা পিস্তল বের করে ডান হাতে নিচ্ছে। তার এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে এলাকায় কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিত তিহিমের ভয়ে এলাকায় ভাড়ায় থাকা স্থানীয় শিল্প কারখানার শ্রমিকসহ বাইরের লোকজনকে ভয়ে চলাফেরা করতে হয় বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা কলিম উদ্দীন মাতবর বলেন, ‘তিহিম আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে, ভাতিজা। বাড়ির পাশেই কামাল নগর স্কুলে লেখাপড়া করতো সে। শিক্ষকের সাথে বেয়াদবির কারণে প্রায় দুই বছর আগে ওই স্কুল থেকে সে নিজেই বের হয়ে চলে আসে। এদিকে ওই স্কুলের পাশে বড় ভাইয়ের একটি নির্মাণাধীন ভবনের কাজ চলছিল। বড় ভাই ঢাকা থাকায় ওই বাসার কাজ নিজে দেখাশুনা করতাম। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে তিহিম ওই ভবনে গিয়ে তারকাটা (পেরেক) বিক্রি করে দেয়। এর কারণ জানতে চাইলে সে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় তার সহযোগী হাসানকে ঘরের তোষকের নিচ থেকে পিস্তল নিয়ে আসতে বলে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনায় তার বাবা জামাল মাতবরকে জানালে তিহিম হুমকি দেয়। পরে এ বিষয়ে মীমাংসার জন্য এদিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে স্থানীয় মুরুব্বি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশি বৈঠকে বসে। এদিকে সালিশের পরপরই তিহিম তার ফেসবুকে লিখে, ‘কইছিলাম না, যে হালা বিচার করতে আইবো, ওরে মাইরা দিমু। আলহামদুলিল্লাহ ভইরা দিরাম বুইরা হালা রে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুক্রবার (২৮ জুন) বেলা ১১টার দিকে আমার নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের ম্যাসেঞ্জারে লাভ রিয়্যাক্ট দেয় তিহিম মাতবর। এ সময় আরো লিখে, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় তোকে টুকরা টুকরা করে ফেলব। তোর বাবা তোর শরীরের এক টুকরাও খুঁজে পাবে না।’ এ ধরনের হুমকিতে ভয়ে সে এখন স্কুলেও যেতে চায় না। ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

গাজীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গাজী ইসলামইল জানান, ‘তেহিম মাতবর এলাকায় অপরাধের সাথে জড়িত। সে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয়। কাউকে মানে না সে। তার গুলি ছোড়ার ভিডিওটি ফেসবুকে দেখেছি। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বারিক বলেন, ‘ভিডিওটা গত ২-৩ মাস আগের। সম্প্রতি তার চাচার সাথে বিরোধ হওয়ায় এখন ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। গুলি ছোড়ার শব্দ শুনে এবং ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে এটা আসল অস্ত্র। আমরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি এবং তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেফতারের পর অস্ত্রটি আসল না নকল সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’