Image description
শিবলী সোহায়েল
 
ছেলেটা তখন মাত্র কিছুদিন হলো এসাইলাম সিক করেছে। দেখতে ভোলাভালা। সবসময় অস্ট্রেলিয়া বি. এন. পির নেতা মোসলেহউদ্দিন আরিফের পিছনে পিছনে ঘোরে, আঠার মতোই লেগে থাকে।
তখন ফ্যা.সি.বাদ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে আরিফসহ বি. এন. পির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, জা. মা. তের এবং প্রবাসী কমিউনিটির লোকজনদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং-সিটিং চলতো। সেই মিটিংগুলোতে দেখতাম, ছেলেটা আরিফের ব্যাগ, ফাইলপত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দেখে মনে হতো, আরিফ হয়তো ওকে সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
টু কাট দি লং স্টোরি শর্ট - ছেলেটার এসাইলাম হয়ে গেল…..
এরপর ১৫ বছর কেটে গেল। এদিকে, বি. এন. পি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন গ্রুপ, জা. মা. তের সমর্থকরা, এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হয়ে বহু ফ্যা.সি.বাদ বিরোধী আন্দোলন করলাম। সেমিনার, প্রতিবাদ সমাবেশ, অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এম্পি, সিনেটরদের সাথে মিটিং, লবিং ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছুই। কিন্তু সেই ভোলাভালা ছেলেটাকে কোথাও আর দেখা গেল না।
জুলাই আন্দোলন যখন শুরু হলো, আমরা সবাই ২১ জুলাই ল্যাকেম্বায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও গায়েবানা জানাজার আয়োজন করলাম। সিডিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। এমন কেউ ছিল না, যে উপস্থিত হয় নি। কিন্তু ভোলাভালা ছেলেটা? তাকে কিন্তু কোথাও দেখা গেল না।
এমনকি রাজনীতিতে নির্লিপ্ত অনেক মানুষ তখন আন্দোলনের অংশ হয়ে গিয়েছিল। মেয়েরা, যারা আগে কখনো রাজনীতি নিয়ে কথা বলত না, তারাও রাত-দিন এক করে কাজ করছিল। একজন বলেছিল, সে ছয় রাত ঘুমায়নি এবং এর শেষ দেখে তারপর ঘুমাবে। মানুষ ৩০০ কিলোমিটার দূর ক্যানবেরা থেকে সিডনি এসে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছিল। অথচ সেই ভোলাভালা ছেলেটা পুরো সময়টায় অনুপস্থিত।
৫ আগস্টের পর, যখন বোঝা যাচ্ছে নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় যাবে, তখন হঠাৎ করেই ভোলাভালা ছেলেটা যেন গর্ত থেকে উদয় হলো। এখন সে নিজেকে বিএনপির চেয়ে বড় বিএনপি প্রমাণে ব্যস্ত। তার নেতা আরিফও এখন তার এক্টিভিটির কাছে কিছুই না। ফেসবুকে দিনে ১৪টা পোস্ট।
পোস্ট দেওয়ার সময় সাধারণত মানুষ সতর্ক থাকে, যেন সহযোদ্ধারা আঘাত না পায়। রাজনৈতিক পার্থক্য থাকলেও ১৫ বছর একসাথে লড়াইয়ে গড়ে ওঠা পারস্পরিক শ্রদ্ধা থেকে এবং মানবিক বোধবুদ্ধি থেকেই এই সতর্কতা।
অস্ট্রেলিয়ায় আমরা যারা একসাথে কাজ করেছি, সবাইকে এব্যাপারে সতর্ক থাকতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই ছেলেটার তো কোনো সহযোদ্ধা নেই। সে তো যুদ্ধই করেনি তার আবার সহ-যোদ্ধা কিসের? আর শ্রদ্ধা -ট্রদ্ধা আবার কি জিনিষ? তাই নির্বিঘ্নে বসে শাহবাগি স্টাইলে জামাত-ব্যাশিং চালিয়ে যাচ্ছে। বিপ্লবের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন উস্কে দিচ্ছে, আওয়ামি শাহবাগিদের কূরাজনীতির সুযোগ তৈরি করছে।
বিএনপি ক্ষমতায় যাবে—এই প্রত্যাশায় সে এখন সবার থেকে এগিয়ে। কিছু না কিছু তো এবার বাগাতেই হবে। প্রথমে আরিফ ওকে জামাতের সমর্থক হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এখন বুঝি, বিএনপি, জামাত কোনটাই না। তার একটাই পার্টি “ধান্দা” পার্টি।
এই ধান্দাই তো এদের রুজি-রুটি। কারও পেটে হাত দেওয়া তো ঠিক না। তাই পাবলিকলি নাম-ধাম ধরে নেম-শেম আপাতত করছিনা।
এরকম ক্যারেক্টার আরও আছে। একজন তো ৫ আগস্টের পর এমন বিপ্লবী হয়ে উঠল যে যেকোনো অনুষ্ঠানে তার ‘অতি বিপ্লবী’ আচরণে আমদেরই লজ্জা পেতে হয়। গত ১৫ বছর কোথায় ছিল, কেউ জানে না। শুরুতে দু-একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু যখন দেখল হাসিনাকে সরানো কঠিন, তখন পল্টি নিল। এখন আবার উদয় হয়ে নিজেকে জুলাই বিপ্লবের চে-গুয়েভার বানিয়ে ফেলেছে।
আরেকজন আছে পুরোপুরি ‘শাহবাগি’। এখন নিজেকে ‘অতি বিএনপি’ বলে দাবি করে। পরিবারসহ পুরাই নাকি আওয়ামি। একসময় কল্লোল মোস্তফাদের সাথে খুব হিল্লোল করতো- ফাঁসি, টাঁসি, তারেক, খালেদা, দুর্নীতি, চেতনা, ফেতনা, ইত্যাদি, ইত্যাদি। একেবারে শেষ দিকে এসে শামিম ওসমান নাকি জয়নাল হাজারির দাবড়ানি খেয়ে এন্টি-ফ্যাসিস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু এ শাহবাগি ইজ অলওয়েজ এ “শাহবাগি”। এখন অতি বিএনপি সেজে গত ১৫ বছর ধরে যারা ধারাবাহিকভাবে লড়াই করছে, যেমন Shafquat Rabbee Anik বা Sabina Ahmed , তাদেরও ‘জামাতিস্ট’ বলে ট্যাগ দেয়। পিনাকি আর ইলিয়াসের নাম শুনলেই বিষোদ্গার করে। কি আর করা- এ শাহবাগি ইজ অলওয়েজ এ “শাহবাগি”। তার কারবার দেখলে বোঝা যায় আওয়ামি লীগ তার মাথায় যেই বী. র্য ভরে দিয়ে গেছে ওগুলাই তার মুখ দিকে ভক ভক করে বের হয়ে আসে।
আপনার আমার চারপাশে এরকম অনেক আছে। যাদেরকেই দেখবেন অতি-বিপ্লবি, অতি-বিএনপি, অতি-জামাত বুঝবেন কোথাও গলদ আছে। একটু ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করলে দেখবেন উপরের ঘটনা গুলার সাথে মিলে যাবে।
মনে রাখবেন অতি মানেই ক্ষতি।