
খুলনায় পুলিশ কমিশনারের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ৫ দিনের মাথায় এবার জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। মাসব্যাপী জুলাই স্মৃতি উদযাপনের নামে মেলা আয়োজনের অনুমতিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের পর এ ঘটনার সূত্রপাত।
এরই মধ্যে এ ইস্যুতে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. ওয়াহিদুজ্জামান অভিযোগটি করেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খুলনা শিববাড়ি মোড়ে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। ডিসি ওই অনুষ্ঠানকে মেলা হিসেবে উল্লেখ করেন। রোববার (২৯ জুন) দুপুরে এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও আগুয়ান-৭১-এর নেতাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামানের মোবাইল কেড়ে নেন।
এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের হয়ে ওয়াহিদুজ্জামান বিকাল তিনটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানেও জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা হয়।
খবর পেয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মো. হুসাইন শওকত ঘটনাস্থলে যান। ছাত্র নেতারা তার কাছেও সার্বিক বিষয় বর্ণনা করে ডিসি অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ দাবি করেন। কারণ ওই ফুটেজ পরে মব বলে তাদের হেনস্থা করার আশঙ্কা করেন তারা। কিন্তু ডিসি অফিস থেকে ফুটেজ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান উদযাপনে জাতীয়ভাবে যে আয়োজন আছে তার বাইরে মেলা করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা কমিটির অনুমোদন লাগবে। এজন্য আগামী ২ জুলাই খুলনার আইনশৃঙ্খলা কমিটির যে মিটিং রয়েছে সেখানে আলোচনার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তবে ১ জুলাই বিভিন্ন মসজিদে এমনকি জিয়া হল চত্বরেও দোয়া হতে পারে। কিন্তু সেখানে স্টল দিয়ে, বিভিন্ন রাইড সামগ্রী বসিয়ে মেলার আদলে জুলাই উদযাপন করা হলে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা কমিটির অনুমতি লাগবে।
এর আগে গত ৫ দিন ধরে পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ চেয়ে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বড় একটি অংশ। তবে পুলিশ কমিশনারের অপসারণের দাবির সাথে একমত নয় সংগঠনের নগর কমিটির আহ্বায়ক মো. শাহরিয়ার।
কালবেলাকে তিনি বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েক দিন ধরে খুলনায় যা হচ্ছে তা সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে আমিই আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলাম। কিন্তু এটা কীভাবে পুলিশ কমিশনারের অপসারণের একদফায় পরিণত হয়েছে তা আমরা জানি না। আলোচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত মিডিয়ায় জানাব।
অপর একটি সূত্র জানায়, মাসব্যাপী জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের নামে সেখানে মেলার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এজন্য সম্প্রতি মেলা রাসেল খ্যাত খুলনার এক সময়ের আলোচিত যুবলীগ নেতা রাসেল তার নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মেলার বিষয়টি জানান দেন। পরে ওই পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। জনশ্রুতি রয়েছে রাসেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েক নেতাকে সঙ্গে নিয়ে মেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে জুলাই শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলসহ অন্যান্য চিত্র, ভিডিও প্রদর্শনী, সভা, সেমিনার ছাড়া অন্য কিছু বা মেলা করা হলে সেটি জুলাইয়ের চেতনার বহির্ভূত কাজ হবে বলে মনে করছেন আলেম সমাজ। মাসব্যাপী কর্মসূচির নামে কোনো মেলা করার অনুমতি না দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন খুলনা জেলা ইমাম পরিষদ নেতারা।
পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা এএফএম নাজমুস সউদ বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে তারা এমন দাবি জানিয়েছেন। কেননা যেখানেই মেলা হয় সেখানেই নগ্নতা থাকে। সুতরাং কোনো ধরনের মেলার অনুমতি না দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইভাবে নগরীতে কোনো মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে কেএমপি কমিশনারের কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
ইমাম পরিষদের সভাপতি আলহাজ মাওলানা মোহাম্মাদ সালেহের নেতৃত্বে একটি টিম জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে পুলিশ কমিশনারকে কোনো মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
প্রয়োজনে এ ধরনের মেলার নামে অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে খুলনা জেলা ইমাম পরিষদ তৌহিদি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়।