
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলায় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত আলোচিত আদেশটি স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
রোববার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ স্থগিতের এ আদেশ দেন।
২০১৮ সালে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়ার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত আদেশটি দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে নিম্ন আদালতের জুডিশিয়াল অফিসারদের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।
এর আগে গত ২৬ জুন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মামলাটির রিভিউয়ের রায়ের জন্য রোববার দিন ধার্য করেছিলেন ।
ওইদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আলোচিত মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি সেই গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সাংবাদিকদের বলেন, “২০১৮ সালে এমন একটি কাজ করা হয়েছে, যেখানে নিম্ন আদালতের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে কার্টেল করে দেয়া হয়েছে। একটি শৃঙ্খলাবিধি করা হয়েছে, যেটি ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগ গ্রহণ করে একটি আদেশ দিয়েছিলেন। এই শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে আমাদের নিম্ন আদালতের জুডিশিয়াল অফিসারদের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। ওই আদেশকে পুনর্বিবেচনা চেয়ে আমরা আবেদন করেছিলাম।”
এই আইনজীবী আরও বলেন, “শুনানিতে আমরা যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তখনকার দিনের বিচার বিভাগকে অ্যাসল্ট করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে বিদেশে পাঠিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই শৃঙ্খলাবিধিকে গ্রহণ করা হয়েছিল তার কথা বলেছি। যেখানে আগে ৯ জন বিচারপতি ভিন্ন আদেশ দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করে ৫ জন বিচারপতির মাধ্যমে সেই শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল। অথচ, সেটি ছিল অধস্তন বিচারকদের জন্য সবচেয়ে বেশি অন্যায় ও অমর্যাদাকর এবং স্বাধীনতার পথে বড় বাধা।”
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যাপারে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার ‘ব্রোকেন ড্রিম’ বইয়ে এ বিষয়ে ঘটনা লিখেছেন। একদিন দেখা গেল তিনি আদালতে ওঠেননি। বলা হয়েছিল, তিনি অসুস্থ, বাড়িতে আছেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আদালতকে প্রশ্ন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি কোথায়, তখন সরকারের পক্ষে বলা হয়েছিল তিনি অসুস্থ। অথচ, খবর নিয়ে জানা গেল তিনি অসুস্থ নন। তিনি নিজেও বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ নন। তারপরেও তাকে এজলাসে আসতে দেয়া হয়নি। তিনি বিদেশে গিয়েছেন। বিদেশ থেকে আর ফেরত আসতে পারেননি। সেখান থেকে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তার বিদায়ের পর বিধিটি গ্রহণ করা হয়েছে। একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বানিয়ে তাদের বাধ্য করে এই আদেশকে গ্রহণ করা হয়েছে।”
শীর্ষনিউজ