
রংপুরের পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমনকে ঠাকুরগাঁওয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হিসেবে বদলি করা হলেও তিনি পুরোনো কর্মস্থলে বসে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও নিয়মনীতির যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়েও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৫ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নাজমুল হক সুমনকে ঠাকুরগাঁওয়ে বদলি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, তিনি ২৫ জুন ২০২৫-এর মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হবেন, অন্যথায় ওইদিনের বিকেল থেকে তাকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজড’ বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য করা হবে।
এরপর গত বুধবার রাতে রংপুর নগরীর এক হোটেলে ইউএনও নাজমুল হক সুমনের জন্য আয়োজিত হয় বিদায় সংবর্ধনা। পীরগাছার ইতিহাসে নিজ দপ্তরের বাইরে নগরীর একটি হোটেলে এই প্রথম এমন সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ব্যয়বহুল এ আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিলেন পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন। কিন্তু সংবর্ধনার পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে আবারও নিজ কার্যালয় পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে অফিস করতে দেখা যায়। এ সময় তিনি বিভিন্ন দাপ্তরিক ফাইলে পুরোনো তারিখে স্বাক্ষর করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমনের বিরুদ্ধে মুজিব বর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ আগস্টের পরেও আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীর একান্ত সহযোগী পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক সুমন সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এ অনিয়ম চালিয়ে যান।আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৩০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। পুনর্বাসিতদের জন্য নাগরিক সেবা কমিউনিটি সেন্টার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ-মন্দির ও কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মক্তব, খেলার মাঠ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাসহ কিছুই নেই। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কহিনুর বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন প্রামানিক ছবিসহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, আজকে ২৬/৬/২৫ ইং বিদায়ী সংবর্ধনা ও শুভকামনা জানিয়ে আসলাম-পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক সুমন স্যারকে। পদোন্নতি ও বদলিজনিত কারণে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সকালে ইউএনও মহোদয় ব্যস্ত থাকায় ৩টার দিকে আমি তার দপ্তরে শুভেচ্ছা জানাই।
স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্র বলছে, নিয়ম অনুযায়ী বদলির আদেশ জারির পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পদ ত্যাগ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ইউএনও নাজমুল হক সুমন তা উপেক্ষা করে এখনও আগের দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। এমনকি সরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যে কর্মকর্তা বদলি হয়ে গেছেন, তার আর এখানে থাকার কথা নয়। এটি প্রশাসনিক শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।' এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ইউএনও পীরগাছা নামে ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে ছালাম জানিয়ে বলা হয়, দীর্ঘ গত ২ বছর ৫ মাস পীরগাছা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছি। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি পীরগাছা উপজেলার মানুষের আশা বেদনার সারথি হতে। শেষে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ জানিয়ে ভাল থাকার আহ্বান জানানো হয়। প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যদি কেউ নির্ধারিত সময়ের পরও পূর্বের কর্মস্থলে অবস্থান করেন এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তাহলে সেটি অবশ্যই বিধি লঙ্ঘন। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।'
এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী ইউএনও নাজমুল হক সুমনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করে ম্যাসেজ দিতে বলেন, ম্যাসেজ করার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোন উত্তর দেননি।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এরফানুল হক আমার দেশক বলেন, পরিপত্র অনুযায়ী দায়িত্ব হস্তান্তরের পর আর অফিস করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।