Image description
আইইডিসিআরের জরিপ

বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। দেশের উপকূলীয় এই জেলায় জুলাই মাসের এই কদিনে শুধু সরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৩০৯ জনের বেশি আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতাল এবং বাড়িতে কতজন চিকিৎসা নিচ্ছেন তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জেলা সদরের কোনো কোনো ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুট ইনডেক্স) ১৫৩ শতাংশের বেশি। যেখানে ব্রট ইনডেক্স ২০ হলেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গতকাল বুধবার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বরগুনায় জরিপ পরিচালনা দলের নেতৃত্বে ছিলেন আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রত্না দাস। তিনি বলেন, বরগুনায় পানযোগ্য পানির ভীষণ সংকট। পানযোগ্য পানির জন্য তারা মূলত বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। তারা বিভিন্ন ধরনের পাত্রে বৃষ্টির পানি ধরে রাখেন, সেই পানির পাত্রেই মশা বংশবিস্তার করে। ফলে মশার বংশবিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বর্তমানে সেখানে জনসচেতনতামূলক প্রচার চলছে।

আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তহমিনা শিরিন জানান, জরিপে দেখা গেছে, বরগুনা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের আটটিতেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ওয়ার্ডে সংক্রমণের হার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বরগুনা পৌরসভার এক নং ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ১৩.৩৩, দুই নং ওয়ার্ডে ৪০.০০, তিন ও পাঁচ নং ওয়ার্ডে ১২.৫০, ছয় নং ওয়ার্ডে ৩১ দশমিক ২৫, সাত নং ওয়ার্ডে ১৫৩.৩৩, আট নং ওয়ার্ডে ৩৩.৩৩ এবং নয় নং ওয়ার্ডে ১৩৩.৩৩। তবে চার নং ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

প্রথমবারের মতো জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর মাধ্যমে বরগুনার ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী ডেন ৩-এর সংক্রমণের শিকার। এ ছাড়া ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ ডেন-২ এবং ১৪ দশমিক ০ শতাংশ রোগী ডেন২+৩ এর সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ এডিস এলবোপিক্টাস এবং ৪২ শতাংশ এডিস এজিপ্টাই মশার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। লার্ভার অস্তিত্ব সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে স্বতন্ত্র বাড়িতে ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে ৩৮. ৪৬ শতাংশ প্লাস্টিক ড্রামে এবং ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্লাস্টিক বালতিতে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা দুজনই পুরুষ। তাদের একজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং অন্য একজন রাজশাহী বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চলতি বছর মশাবাহিত এ রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ জনে। যাদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী। এর মধ্যে শুধু চলতি জুন মাসেই মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। এ ছাড়া গত এক দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩২৬ জন। এ নিয়ে টানা পাঁচ দিন দৈনিক তিনশর বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলো। এর আগে শনিবার ৩৫২ জন, রোববার ৩২৯, সোমবার ৩৯২ এবং মঙ্গলবার ৩৯৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩২৬ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১৮ জন বরিশাল বিভাগের। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচজন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৩ জন, খুলনা বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৯ জন এবং সিলেট বিভাগে একজন রোগী ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৭০ জন, যার মধ্যে ৫ হাজার ২১১ জন পুরুষ ও ৩ হাজার ৬৫৯ জন নারী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৮৫ ডেঙ্গু রোগী। এ বছর এটাই এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা। তাদের মধ্যে ৩১৮ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ৭৬৭ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।

দেশে ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং মৃতের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর। ২০২২ সালে সারা দেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, যা বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।