
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখলেন বুকের ওপর যেন কিছু ভারী বসে আছে। নড়াচড়া করতে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করতে পারছেন না! আপনি জেগে আছেন, অথচ শরীর কাজ করছে না—এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস, আর সাধারণভাবে একে অনেকে ‘বোবায় ধরা’ বলে থাকেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভয়ঙ্কর বা অতিপ্রাকৃত কিছু নয়, বরং ইন্দ্রিয়ঘটিত একটি অবস্থা। এটি ঘুম এবং জেগে ওঠার মধ্যবর্তী একটি পর্যায়, যেখানে শরীর ঘুমন্ত থাকলেও মস্তিষ্ক জেগে ওঠে। তখন হ্যালুসিনেশনের মতো ভৌতিক কিছু দেখার অভিজ্ঞতা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে, "স্লিপ প্যারালাইসিসকে অনেকেই জ্বিনে ধরা বা ভূতে ধরার কুসংস্কারের সঙ্গে যুক্ত করেন, কিন্তু এটি সম্পূর্ণভাবে ঘুমজনিত একটি শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।"
ঘুমের দুটি স্তর—নন-রেম স্লিপ এবং রেম স্লিপ (র্যাপিড আই মুভমেন্ট)—এর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি হলে এই সমস্যা দেখা দেয়। মস্তিষ্কে থাকা গ্লাইসিন ও গামা অ্যামাইনোবিউটারিক অ্যাসিড (GABA) নামক রাসায়নিক পদার্থ মাংসপেশি অসাড় করে দেয়। ফলে মানুষ ঘুমের মধ্যে বা জাগার সময় সম্পূর্ণরূপে শরীর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
এটি মূলত নারকোলেপসি, মাইগ্রেন, উদ্বেগজনিত ব্যাধি এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
স্লিপ প্যারালাইসিসের সাধারণ লক্ষণ
জেগে থাকলেও শরীর নাড়াতে বা কথা বলতে না পারা, বুকের ওপর ভার অনুভব, তীব্র আতঙ্ক, গরমে ঘাম হওয়া, কোনো ভয়ংকর অস্তিত্ব বা প্রাণীর অনুভব, হ্যালুসিনেশন: ফিসফিস, গর্জন বা গুঞ্জনের মতো শব্দ কানে আসা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ কী?
স্লিপ প্যারালাইসিস সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে যাদের মধ্যে ঘনঘন হয় (সপ্তাহে একাধিকবার), তাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসার অংশ হিসেবে থাকে: সচেতনতা তৈরি ও মানসিক কাউন্সেলিং, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, “স্লিপ প্যারালাইসিস গুরুতর কোনো রোগ নয়, তবে এর পুনরাবৃত্তি হলে নিউরোলজিস্ট বা হেড-নেক সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
ঘুমের এই সমস্যা ভয়ের নয়, বরং সচেতনতা ও সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই, আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় গুরুত্ব দিন।