Image description

জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত হন নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বাসিন্দা রিফাত হোসেন।

গত বছরের ১৮ জুলাই দুপুর ১২টার সময় রাজধানীর উত্তরা রাজলক্ষ্মী এলাকায় পুলিশের চারটি গুলি তার গায়ে লাগে। এর মধ্যে তিনটি গুলি বের করা হয়েছে। তবে নাকের ভেতরে আটকে থাকা গুলির যন্ত্রণায় ১১ মাস ধরে ভুগছেন তিনি।

জুলাইযোদ্ধা রিফাত ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়নের এন্দোয়া গ্রামের মোতাহার হোসেনের ছেলে। তার মায়ের নাম ফরিদা বেগম।

২২ বছর বয়সি রিফাত ধামইরহাটের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত আগ্রাদ্বিগুন বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকার একটি কলেজ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন। পরে উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই একটি ভাড়া বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন।

জুলাই বিপ্লবের অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন রিফাত। তার নেতৃত্বে ছাত্রদের কয়েকটি অংশ রাজপথে লড়াই সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তালিকায়’ তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা দিয়ে রিফাত হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘১৮ জুলাই উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকায় নিজের চোখের সামনে অনেক জনের প্রাণ হারাতে দেখেছি। তবুও মনের মধ্যে প্রচুর সাহস রেখে রাজপথে আন্দোলন ধরে রেখেছিলাম। আন্দোলন চলাকালীন পুলিশ নির্মমভাবে ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়। এতে আমার হাত, পা ও নাকে মোট চারটি গুলি লাগে। আমি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

রিফাত হোসেন আরো বলেন, জ্ঞান হারানোর পরে আমাকে উদ্ধার করে বন্ধু ও স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আমার হাত-পা ও গায়ে থাকা তিনটি বুলেট বের করা হলেও নাকের মধ্যে থাকা একটি বুলেট এখনো রয়ে গেছে।

চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে রিফাত বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমি বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা নিচ্ছি। জুলাই আন্দোলনে আমার নাম আহতের তালিকায় রয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারিভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমার নাকের বুলেট বের করতে অপারেশন করা হবে।

রিফাত জানান, আহত হওয়ার প্রথম দিকে বুলেটের প্রচুর যন্ত্রণা করত। তবে ভালো চিকিৎসকের ওষুধ সেবনের কারণে এখন তেমন কষ্ট হয় না। বর্তমানে আমি নাকে বুলেট নিয়ে ভার্সিটিতে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি।

রিফাতের মা ফরিদা বেগম আমার দেশকে বলেন, ‘আমার সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি। অপারেশন শেষে আমার সন্তান যেন আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেÑ সেই প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সব আহত ও নিহত পরিবারের জন্য আমার দোয়া ও ভালোবাসা রইল।’