
দাবি-দাওয়ার ছলছুতোয় আর রাজধানীর সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ করতে দেবে না সরকার। সমাবেশের নামে সড়কে নামলেই অ্যাকশনে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাস্তা অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা, যানজট তৈরিসহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কার্যকলাপ আর সহ্য করা হবে না।
এ বিষয়ে উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) ইতোমধ্যে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারকে তার ওপর অর্পিত আইনি পদক্ষেপ নিতে সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী আমার দেশকে বলেন, যে কেউ যখন-তখন রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। জনদুর্ভোগসহ ব্যাপক যানজট তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ হবে না, এমন স্থানে সভা-সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সব ধরনের নিরাপত্তা দেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
জানা গেছে, রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে দাবি-দাওয়ার নামে হঠাৎ করেই যত্রতত্র সড়ক অবরোধ করছেন যে কেউ। ৮ আগস্ট সরকার গঠনের পর থেকে নানা অজুহাতে রাস্তায় নেমে পড়ছেন আন্দোলনকারীরা। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন জনগণ। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে আসছিল। ডিএমপি কমিশনার বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন, জনদুর্ভোগ এড়িয়ে যৌক্তিক দাবি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে। কিন্তু সরকারের সহনশীলতাকে দুর্বলতা মনে করে সড়ক অবরোধ করা রীতিমতো ডালভাতে পরিণত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। এ কারণে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।
পুলিশের ওপরই আস্থা রাখতে চায় সরকার। নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে পুলিশ এখন রাজধানীর সড়ক অবরোধসহ সব ধরনের বিশৃঙ্খলা শক্তহাতে মোকাবিলা করতে অনেকটাই প্রস্তুত বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে ডিএমপির সক্ষমতা অনেকাংশেই বেড়েছে বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে ডিএমপির পক্ষ থেকে।
জানা যাচ্ছে, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। সড়ক অবরোধের নামে জনদুর্ভোগ কমাতে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। বিষয়টি জানানো হলে দলগুলো থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এরপর থেকে কঠোর হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কঠোর হওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াতসহ বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোকে জানানো হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিএমপি কমিশনার আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপি সদর দপ্তরে বৈঠকে বসবেন। বৈঠকে দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের উদ্যোগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দলগুলোর কাছে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হবে।
জানা যাচ্ছে, সভা-সমাবেশের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ ৪০টি মাঠ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানাভিত্তিক মাঠগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন শুরু করেছেন ডিএমপির কর্মকর্তারা। মাঠগুলোর সর্বশেষ অবকাঠামগত অবস্থার ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। সেগুলোর সার্বিক অবস্থা বিস্তারিত তুলে ধরা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে। সেসব স্থানে সব ধরনের সভা-সমাবেশ করার যৌক্তিকতা তুলে ধরবে ডিএমপি।
সভা-সমাবেশ করলে জনজীবনে দুর্ভোগ কীভাবে লাঘব হবে; তা-ও বলা হবে। এক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেবল ছুটির দিনে সমাবেশ করার জন্য দলগুলোর কাছে আহ্বান জানানো হবে। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের এসব বিষয় প্রচারণায় এলে জনমনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বার্তা পাবে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কোনো অবস্থাতেই কর্মদিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেন সমাবেশ না করা হয়, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হবে। সার্বিক বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইতোমধ্যে সিগন্যাল পেয়েছে ডিএমপি।
সূত্র জানায়, কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে সর্বশেষ আগারগাঁওয়ে এনবিআর ও বিডার আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। গত শনিবার সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে শেরেবাংলা নগর থানার আওতায় শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও রোডে অবস্থিত এনবিআর কার্যালয়, বিডা কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলো। এর আগে গত ১০ মে সচিবালয় ও যমুনার আশপাশে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তারপর থেকে নিয়মিতভাবে মাঝেমধ্যেই ডিএমপির পক্ষ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হতো।
জানা যাচ্ছে, উচ্চপর্যায়ের সিগন্যাল পাওয়ার পর জনদুর্ভোগ লাঘবে আর ধৈর্য ধরতে রাজি নয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। অ্যাকশনে যাওয়ার অংশ হিসেবে গত রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবরোধকারীদের ওপর কিছুটা কঠোর হয় পুলিশ। সড়ক বন্ধ করার কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় আন্দোলনকারীদের ওপর জলকামান, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ।