
কুমিল্লার দেবিদ্বারে হাত দিতেই উঠে আসে সড়কের কার্পেটিং। বিষয়টি দেখে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সোমবার বিকালে উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর থেকে সুবিল ইউনিয়নের বুড়িরপাড় বাজার পর্যন্ত সড়ক পরিদর্শনে যান তিনি। এ সময় হাত দিতেই উঠে এলো পাকা সড়কের কার্পেটিং। এ সময় এমন নিম্নমানের কাজ দেখে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেন হাসনাত।
স্থানীয়রা জানান, সদ্য নির্মিত দুই কিলোমিটার সড়কের কাজ পান ‘মেসার্স আরতার অ্যান্ড ইয়েস্টেড ইন্টারন্যাশনাল’ কোং লিমিটেড। এটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এরপর নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রায় চার বছর কাজটি মেকাডন করার পর ঢালাই করা হয়নি।
সোমবার দুপুরে এলাকাবাসীর অভিযোগ পাওয়ার পর রাস্তাটি পরিদর্শনে যান হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার দেখতে পান। এরপর গত তিন-চার দিন আগে কাজ করা পিচ ঢালাইয়ের বিভিন্ন অংশ হাতের টানেই তুলে ফেলেন। এরপর ঢালাইয়ের নিচে কোন খোয়া, বিটুমিন পিচ দেখতে পাননি। লাল রঙের মাটির ওপর ঢালাই দেখতে পান। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলীকে ডেকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর থেকে বুড়িরপাড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের দরপত্র দেওয়া হয়। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি টাকার চেয়েও বেশি। এই কাজের ঠিকাদার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সুবিল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে রাস্তাটি টেকসই হবে না এবং অল্প দিনের মধ্যেই ভেঙে যেতে পারে। স্থানীয়রা রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অনিয়ম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আব্দুল্লাহপুরের বাসিন্দা অলিউল্লাহ খান বলেন, চেয়ারম্যান আবু তাহের আওয়ামী লীগের আমলে প্রভাব খাটিয়ে দেবিদ্বারে বেশ কিছু সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। নিম্নমানের কাজ হলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করত না। এ সময়ে এসেও তিনি এই অনিয়ম ছাড়তে পারেনি। আমরা তার ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
ঠিকাদার আবু তাহের চেয়ারম্যান বলেন, আমি কাজ করছি, এটা বুঝে নেবে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার। আমি এসব বুঝি না। তবে কোনো সমস্যা হলে আমার লোক আছে ঠিক করে দেবে।
একপর্যায়ে নিম্নমানের কাজ হয়েছে স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরি। আমি এটি ঠিক করে দেব।
এ বিষয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সুবিল ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর থেকে বুড়িরপাড় বাজার পর্যন্ত সড়কের কিছু বাজেট আগেই এসেছে। পরে বর্তমান সরকার আরও কিছু বাজেট দিয়েছেন। গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকায় এসে দেখি গত তিন চার দিন আগের পিচ ঢালাই হাতের টানে চলে আসছে। ঢালাইয়ে পর্যাপ্ত বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি। নিচে কোন খোয়া নেই। মাটির ওপর পিচ ঢালাই করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে ডেকে দেখানো হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন। কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। জনগণের টাকা যেন সঠিক ব্যবহার হয়। একটা টাকাও যেন কারও পকেটে না ঢুকে। এটা হচ্ছে কথা। সরকার যে টাকা দিবে মানুষের শ্রম ঘামের টাকা। ট্যাক্সের টাকা। এটা দিয়ে রাস্তা হবে। এ রাস্তা দিয়ে মানুষ হাঁটবে। এক টাকা কোনোভাবে অপচয় করতে দেব না। এই রাস্তা দিয়ে জনগণ হাঁটবে। আগে আওয়ামী লীগ যা করেছে এই সময়ে তা ভুলে যেতে হবে।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ চন্দ্র সরকার বলেন, আমি নিজে রাস্তায় ঘুরে দেখেছি। রাস্তায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হাসনাত আব্দুল্লাহকে জানিয়েছি। আপাতত ওই রাস্তার কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।