
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানির জন্য ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল হককে আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়।
শুনানির একপর্যায়ে মনিরুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে আদালতকে বলেন, ‘আমার বুকে সার্জারি হয়েছে।’ এ কথা বলার পর তিনি তাঁর পরনের পাঞ্জাবির বোতাম খুলে ফেলেন। বুক দেখিয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি খুব অসুস্থ।’
আজ সকাল আটটার দিকে কারাগার থেকে ঢাকার আদালতের হাজতখানায় মনিরুলকে আনা হয়। তিনি ছাড়াও আজ সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলামকে আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
সকাল ১০টার দিকে হাজতখানা থেকে কড়া নিরাপত্তায় আসামিদের সিএমএম আদালত কক্ষে তোলা হয়। কাঠগড়ায় তোলার পর একে একে আসামিদের দুই হাত পেছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেকের এক হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয় পুলিশ।
আনিসুল হকের ডান পাশে ছিলেন সালমান এফ রহমান। বাম পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাজুল ইসলাম। তাঁরা নিজেদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। পরে আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও শাজাহান খান নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন।

‘ভুতুড়ে মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে’
সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন। যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা সাজেদুর রহমান হত্যা মামলায় আনিসুল, সালমান ও শাজাহানের পাঁচ দিন করে রিমান্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ।
তখন আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন শাজাহান। তিনি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলতে থাকেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি বুঝি না, কেন পিপি সাহেব আমাদের ভুতুড়ে মামলায় একের পর এক রিমান্ডে নিতে চাচ্ছেন।’
শাজাহান খানের উদ্দেশে আদালত বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন পিপি করেননি। প্রসিকিউশন বিভাগ রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে।
শাজাহান খান বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি আদালতকে বলছি, আমাদের কেন ভুতুড়ে মামলায় বারবার রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে।’
শাজাহান খানের এমন কথার প্রতিবাদ করেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁরা বিচার চেয়ে আদালত ও থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ তদন্ত করে যাঁদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাচ্ছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দুই হাজার নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আরও বহু ছাত্র-জনতা আজ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেছেন শাজাহান খান, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমানরা। এসব হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাঁরা সরাসরি জড়িত।
শুনানিতে আদালতে কোনো কথা বলেননি আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান। শুনানি নিয়ে আদালত আনিসুল, সালমান ও শাজাহান খানের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

‘আমার বুকে সার্জারি হয়েছে’
কাঠগড়ায় আনিসুল হকের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল হক।
যাত্রাবাড়ী থানায় করা রিটন উদ্দিন হত্যা মামলায় মনিরুলকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর (মনিরুল) নাম ধরে ডাকেন। মনিরুল ডান হাত উঁচু করে উপস্থিত থাকার কথা জানান।
রাষ্ট্রপক্ষে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সব থেকে বেশি মানুষ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে যাত্রাবাড়ীতে। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ২০ থেকে ২৫টি লাশ স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। নির্বিচার সাধারণ ছাত্র-জনতাকে গুলি করার হত্যার ঘটনার সঙ্গে ওই এলাকার তৎকালীন সংসদ সদস্য মনিরুল সরাসরি জড়িত ছিলেন।
পিপির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর মনিরুলের আইনজীবী আদালতকে বলেন, তাঁর মক্কেল ভীষণ অসুস্থ। হৃদ্রোগের কারণে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তাহলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হোক।
এ সময় আদালতে কথা বলার জন্য অনুমতি চান মনিরুল। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আদালতকে বলেন, ‘আমার বুকে সার্জারি হয়েছে।’
এ কথা বলার পর মনিরুল তাঁর পরনে থাকা পাঞ্জাবির বোতামগুলো খুলে ফেলেন। নিজের বুক দেখিয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি খুব অসুস্থ। একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।’
আদালত শুনানি নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার রিটন উদ্দিন হত্যা মামলায় মনিরুলের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
যাত্রাবাড়ীর আরেকটি হত্যা মামলায় মনিরুলের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে এই আবেদনটি নাকচ করেন আদালত।