Image description

নওগাঁর ধামইরহাট থানার রক্ষিত ট্রাংক থেকে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কা- নিয়ে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে থানা হেফাজতে থাকা ট্রাংকের তালা ভাঙা, ট্রাংকের ওপরে প্রশ্নপত্র ছেঁড়া অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জেলা পুলিশ জানায়, একজন আসামিকে ওই কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়। সেই আসামি ট্রাংক খুলে প্রশ্ন বের করে।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং এইচএসসি পরীক্ষার ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের ওই প্রশ্নপত্র সব কেন্দ্র থেকে বাতিল করেছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক আলাদা আলাদা তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কান্ডে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিনকে প্রধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পত্নীতলা সার্কেল শরিফুল ইসলাম ও জেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

নওগাঁ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বিপিএম দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সিলগালা করে ট্রাংকে নারী হাজতখানায় রাখা হয়েছিল। বুধবার রাতে একটি মামলার এক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই কক্ষে রাখা হয়। সিলগালা করা ওই ট্রাংকের চাবিও ওইখানেই ছিল। কোনো এক সময় ওই আসামি ট্রাংক থেকে সিলগালা ও তালা খুলে প্রশ্নপত্র বের করে ট্রাংকের ওপরে রাখে। এ ঘটনায় একজন এসআই ও কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পত্নীতলা সার্কেল শরিফুল ইসলামকে প্রধান করে ধামইরহাট এমএম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম ও ডিএসবির ইন্সপেক্টরকে সদস্য করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানায়, কোনোভাবেই প্রশ্নপ্রত্র বাইরে ছড়ায়নি। ওই আসামি ট্রাংক খুলে যে প্রশ্নপত্র বের করে সেটি ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নপত্র। ওই প্যাকেটে ৫০টি প্রশ্নপত্র ছিল। তদন্ত কমিটি ৫০টি প্রশ্নপত্রই পেয়েছে। তারমধ্যে দুটি প্রশ্নপত্র অংশিক ছেঁড়া ছিল। তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার থেকেই তদন্তের কাজ শুরু করেছে। প্রতিবেদন পেলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে আসামি ট্রাংক থেকে প্রশ্নগুলো বের করেছে তার বিরুদ্ধে এ ঘটনায় মামলা করা হবে।

জেলা প্রশাসন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিন দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছে। কোনো প্রশ্নপত্রই বাইরে ছড়ায়নি। তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় এত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস আরও নিরাপত্তার মধ্যে রাখা উচিত ছিল। তদন্তে তদের কাছে মনে হয়েছে প্রশ্নপত্রগুলো যে নিরাপত্তায় থানায় রাখার দরকার ছিল সেখানে সেই নিরাপত্তায় রাখা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসককে দেওয়া হবে।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ ধামইরহাট থানা পরিদর্শন করা হয়েছে।এ ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে গঠন করা হয়েছে। আগামী ২২ জুলাই হতে যাওয়া ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের ওই প্রশ্নপত্রটি সব কেন্দ্র থেকে বাতিল করা হয়েছে।

আগামী ২২ জুলাইয়েই আলাদা প্রশ্নপত্রে ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।