
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০নম্বর পাওয়া বহু প্রার্থীকে ‘পাস’ দেখিয়ে চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। অথচ পরীক্ষায় ভালো করেও ২০ হাজারের বেশি প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পদ ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের ফলাফল নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে।
অভিযোগকারী একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষায় ৪০ বা তার বেশি নম্বর পেলে পাস ধরা হয়। সে হিসেবে যারা মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন তারা সকলেই ৪০ কিংবা তার বেশি নম্বর পেয়েছেন। অথচ কেবলমাত্র ভাইভার ভিত্তিতে তাদের ফলাফল ‘অনুত্তীর্ণ’ দেখানো হয়েছে। অথচ ভাইভার নম্বরই ই-সনদে যোগ করা হয়নি। এতে প্রশ্ন উঠেছে ফলাফল প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন এবং পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং আইনি পদক্ষেপের কথাও ভাবছেন অনেকেই।
ভুক্তভোগী প্রার্থী মিলন বলেন, “সরকার নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ৪০ পেলে পাস। লিখিত পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫৫-৬০ নম্বর পাবো বলে ধারণা করছি। মৌখিক পরীক্ষাও অনেক ভালো দিয়েছি। তবু আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে। অথচ এখনও অনেক পদ শূন্য। তাহলে এ ফলাফলের মানদণ্ড কী?”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা চললেও এবারের ১৮তম নিবন্ধনে ফলাফল ঘিরে এমন অভিযোগ গ্রহণযোগ্যতার বড় প্রশ্ন তুলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এনটিআরসিএ’র পক্ষ থেকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা না এলে প্রতিবাদ আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করেছেন এক্সটার্নাল অর্থাৎ বাহির থেকে যারা পরীক্ষা নিতে এসেছিলেন তারা। প্রার্থীদের পাস, ফেল অনেকটা তারাই নির্ধারণ করেছেন। মৌখিক পরীক্ষা এবার তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় ফেলের সংখ্যা কিছুটা বেশি।’
কোন বিষয়ে কত পদ ফাঁকা, উত্তীর্ণ করানো হয়েছে যতজনকে
এনটিআরসিএর সংগৃহীত শূন্য পদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভৌত বিজ্ঞানে পদ ফাঁকা রয়েছে ১৩ হাজার ৯৭টি। এ পদে ভাইভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ৪ হাজারের বেশি প্রার্থী। আর উত্তীর্ণ করানো হয়েছে ২ হাজার ৭১২ জনকে।
সহকারী মৌলবিতে (আরবি) সারা দেশে পদ ফাঁকা আছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। ১৮তম নিবন্ধনে এ বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৫ হাজার ৫৩১ জন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ৫ হাজার ৫২২ জন। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪ হাজার ৩৯৯ জন। আর ফেইল আসছে ১১২৩ জনের।
গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান, প্রভাষক, মাদরাসা, ও কারিগরি মোট পদসংখ্যা ৫ হাজার ৭০০ এর বেশি। এ পদগুলোতে ভাইভা প্রার্থী ছিলেন এক হাজার ২৩৩ জন। আর পাস করানো হয়েছে ৮৫২ জন। ফেল করানো হয়েছে ৩৮১ জনকে।
ইবতেদায়ী মৌলবিতে ৮ হাজারের বেশি পদ ফাঁকা রয়েছে। এ পদে লিখিত পাস করেছিলেন এক হাজার ৫২ জন। এদের মধ্যে ১১৬ জন মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করেছেন।
শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজারের বেশি পদ ফাঁকা রয়েছে। এ পদে ১৮তম নিবন্ধনে ভাইভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন দুই হাজার ৬৪১ জন। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন এক হাজার ৭০০ জন। আর ফেল করানো হয়েছে ৯০০ এর অধিক প্রার্থীকে।