বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ বৈধকরণে রীতিমতো হিড়িক লেগেছে। ভিসা বৈধকরণের জন্য প্রতিদিন গড়ে ২৫০টিরও বেশি আবেদন পড়ছে। এর মধ্যে মোট ৩৩ ক্যাটাগরির ভিসাধারী রয়েছেন। যাদের অধিকাংশ আবেদনকারীর ভিসার মেয়াদ শেষ। অর্থাৎ অবৈধ বলে জানিয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পাসপোর্ট অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্র। পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্র জানায়, আবেদনকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি নাগরিক, ফুটবলারসহ নানা কাজ করছেন। এসব অবৈধ নাগরিককে প্রতিদিন গুনতে হবে ৩ হাজার টাকা জরিমানা। সেই হিসেবে ৯০ দিন অতিক্রান্ত হলে ৯১ দিনের জন্য ২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এমনিতে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ-ধর্মীয় অনুষ্ঠান, দীর্ঘ ছুটি উপলক্ষে ভিসা বৈধকরণের চাপ বেশি থাকলেও ডিসেম্বর মাসে এটা তুলনামূলক বেশি ছিল। এবং জানুয়ারিতে এটা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে দাবি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ গত ৪ঠা ডিসেম্বর জরিমানার বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বৈধ ভিসায় আসা বিদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে অবস্থান করলে প্রথম ১৫ দিনের ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা জরিমানা। ১৫ দিনের বেশি হলে সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন ২ হাজার টাকা অর্থাৎ ৯০ দিনে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা। এবং অবৈধভাবে অবস্থানের মেয়াদ ৯০ দিনের বেশি ৯১ দিন থেকে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করা হবে। এবং একই সঙ্গে এসব বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টের (১৯৪৬ সালের ৩১ নম্বর আইন) আওতায় সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে। এসব মামলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও বিশেষ শাখা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক অথবা বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশি স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের অবৈধ অবস্থানের জরিমানা মওকুফ করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের ৩ মাস পর্যন্ত অবৈধ অবস্থানের জন্য জরিমানা মওকুফ করা যাবে। তিন মাসের বেশি হলে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হবে।
এক্ষেত্রে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অবৈধভাবে অবস্থান করা ব্যক্তি বাংলাদেশি সিভিল সার্জন, অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক কর্তৃক দেয়া চিকিৎসা সনদ বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে পাঠালে তারা যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপযুক্ত সুপারিশসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগে পাঠাবেন। এটা পাঁচদিনের বেশি হলে হাসপাতালে ভর্তি আছে এমন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে অবৈধ অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিক মহাপরিচালক এবং পরিচালকের স্বাক্ষরসহ জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া ৩০ দিন পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় অবস্থান করলে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্টধারী বিদেশি নাগরিককে বিমান-স্থল বন্দরে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর-ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে জরিমানা, সার্ভিস চার্জ এবং ভিসা ফি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা রসিদ জমা দিয়ে দেশ ত্যাগ করতে হবে। এই জরিমানার আওতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, ফ্লাইট বাতিল ইত্যাদি কারণে কেউ অবস্থান করলে তাকে অবৈধ বলে গণ্য করা হবে না। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই পরিপত্র কার্যকর হওয়ার পর ইতিপূর্বে এ বিষয়ে জারিকৃত সকল পরিপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ এর আগে ১৫ থেকে ৯০ দিন এবং এর বেশি সময় অবস্থান করলে সর্বোচ্চ জরিমানা ছিল মাত্র ৩০ হাজার টাকা। সেটা বর্তমানে বাতিল করা হয়েছে। এদিকে গত ২৪শে ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের আগামী ৩১শে জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বৈধতা অর্জন করতে বলা হয়েছে। ৩১শে জানুয়ারির পর অবৈধ অবস্থানকারী ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্টের প্রধান কার্যালয় (পাসপোর্ট, ভিসা ও পরিদর্শন) পরিচালক নাদিরা আক্তার মানবজমিনকে বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন অসংখ্য বিদেশি নাগরিক ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করার আবেদন করেন। তাদের মধ্যে যাদের অবৈধ বা ভিসার মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে তারাও আবেদন করেন। তাদেরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত জরিমানা পরিশোধের প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আবেদন করতে হয়।